সংকট কাটিয়ে কেমন হবে পৃথিবী

>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ–বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ–বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

ভয়ংকর এক সময় পার করছি আমরা। চারদিকে শুধু ভয়, উদ্বেগ আর আতঙ্ক। পৃথিবী স্থবির বলা চলে। তবু জীবন কি থেমে থাকে? চলে যাচ্ছে সময়। আয়ু থেকে একটি একটি করে দিন কীভাবে যে চলে যাচ্ছে! প্রতিটি এলাকার হালহাকিকত নিশ্চুপ, ভীতসন্ত্রস্ত। আর এই বিষয়টাকেই সন্ত্রাসীরা করেছে তাদের হাতিয়ার। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও অপরাধ কর্মকাণ্ড বহাল তবিয়তেই আছে।

আজকে বলছি অন্য এক বিষয় নিয়ে। আমাদের এলাকায় কলেজপড়ুয়া কিছু ছেলে সদা সর্বদা বাসার সামনের আমগাছটার নিচে বসে আড্ডা দেয়। দুঃখজনকভাবে তাদের বেশির ভাগই এই অল্প বয়সে  থায় অশ্রাব্য গালি আর সন্ত্রাসী বড় ভাইয়ের হুমকি যেন মামুলি।

কয়েক দিন আগের কথা। ইফতার করে ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছি। হঠাৎ বাইরে দৌড়াদৌড়ির শব্দ। বোঝার আগে দিয়েই ভাইয়া বলল, ও নাকি দুটো চোরকে দেখেছে আমাদের কম্পার্টমেন্টের দেয়াল টপকে ভেতরে আসতে, একজন আরেকজনকে কী যেন একটা পকেটে রাখতে বলছিল, আর ওদের পিছে নাকি পুলিশ ধাওয়া করেছে। বাইরে তাকিয়ে দেখি বিষয়টা যথার্থ। কিছুক্ষণ অবজার্ভেশন করলাম।

দেখলাম ওই ছেলেগুলোই। পুলিশকে দেখলাম দলপতিকেই জেরা করছে।

তখনো কিছুটা ধোঁয়াশায় ছিলাম যে কেন পুলিশ এল। পরে শুনলাম যে তাদের নাকি পরিত্যক্ত ঘরটায় ঢুকতে দেখেছে, তা–ও সন্দেহজনকভাবে।

দলপতি লাগাতার অস্বীকার করছে নিজেদের দোষ। একপর্যায়ে আশ্রয় নিতে পুলিশকে সন্ত্রাসী বড়ভাইয়ের হুমকি দিয়ে মুঠোফোন বের করে কেউ একজনকে ফোন দেয়। সঙ্গে তার অনুসারীরা উল্টো পুলিশকে শাসিয়ে দিচ্ছিল আর বলছিল, যাকে ভেতরে যেতে দেখেছেন তাঁকে ধরুন।

পুলিশের কাছে উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় চলে যেতে বাধ্য হয়।

পুলিশের চলে যাওযার পর ওরা জোরে জোরে অট্টহাসি দিচ্ছিল আর বলছিল, ভয় পেলাম রে অনেক ভয় পেলাম।

বিষয়টা নিয়ে একটু ঘেঁটে জানতে পারলাম, ওরা নাকি আগেও দেয়াল টপকে ভেতরে এসেছে আর দারোয়ান তাদের ধরায় দুই দিন দারোয়ানকে ছুরি দেখিয়েছে।

বিষয়টা খুব চিন্তার। এরা এত ছোট বয়সে এভাবে স্বেচ্ছাচারিতা আর ঔদ্ধত্য নিয়ে এলাকায় এমন সংকটাপন্ন সময়ে সন্ত্রাস করে কীভাবে? আর তার থেকে বড় কথা, এদেরও তো পরিবার আছে। বাসা থেকে প্রতিদিন বের হচ্ছে কীভাবে?
আফসোস হলো, এই যে শিক্ষা এদের হাতের কাছে পৌঁছালেও এরা শিক্ষাকে আপন করছে না, গ্রহণ করছে না। এর কারণ কী?

এর কারণ কি এই যে মাদক এখন সহজলভ্য। চিন্তা করে দেখুন মাদকপ্রাপ্তি কতটা সহজ! মাদক এদের সহজাত বুদ্ধিমত্তাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ভেবে দেখুন তো সংকট কেন আসে? মানুষকে শুধরে দিতে। এবার ভেবে দেখুন এই সংকট কাটিয়ে ওঠার পর কেমন পৃথিবী দেখতে পাচ্ছেন!

আমার ব্যক্তিগত মতামত বলছি। লকডাউন অবশ্যই প্রকৃতিকে দিয়েছে এক নতুন করে বেঁচে ওঠার তাগিদ। এই লকডাউন আমাদের দেখাল প্রকৃতির এক অপরূপ মুগ্ধতা। প্রকৃতি আবার বেঁচে উঠেছে তার সৌন্দর্য নিয়ে। কিন্তু সমাজের চেহারা কেমন হবে? আমাদের চেষ্টাই পারে প্রকৃতির মতো সমাজটাকেও নতুন জীবন দিতে। নির্মল সমাজ গঠনে আমি–আপনি এগিয়ে এলেই হবে নতুন দিনের সূচনা। তাই এখন সময় যতটা খারাপ কাটুক না কেন, আশা রাখি সত্যিই আঁধারের পর আলো আসবেই।

* লেখক: মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। [email protected]