গাইবান্ধায় আতঙ্ক ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মানুষ

এভাবেই ট্রাকে করে শ্রমিকেরা গাইবান্ধায় আসছেন। পুলিশ দেখার আগেই ফাঁকা জায়গায় নেমে পড়ছেন। গতকাল বিকেলে পলাশবাড়ীর শিল্পী হোটেলের সামনে।  ছবি: প্রথম আলো
এভাবেই ট্রাকে করে শ্রমিকেরা গাইবান্ধায় আসছেন। পুলিশ দেখার আগেই ফাঁকা জায়গায় নেমে পড়ছেন। গতকাল বিকেলে পলাশবাড়ীর শিল্পী হোটেলের সামনে। ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধা জেলার প্রবেশপথ, রাস্তার মোড় ও নৌঘাট—এমন প্রায় ৫০টি স্থানে বসানো হয়েছে পুলিশের পাহারা। বিশেষত ঈদ সামনে রেখে চারদিকে কড়া নিরাপত্তা। এরপরও প্রতিদিন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে স্রোতের বেগে মানুষ গাইবান্ধায় আসছেন।

কেউ প্রাইভেট কার, কেউ মাইক্রোবাস কিংবা পিকআপ-ভ্যান ভাড়া করে আসছেন। ঈদে সড়কপথে কড়াকড়ির কারণে বিকল্প হিসেবে নৌপথ ব্যবহা করা হচ্ছে। চার গুণ ভাড়া দিয়ে নৌকায় মানুষ বেশি আসছে। ফলে ঈদে ব্যাপক হারে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত ১০ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলা লকডাউন করা হয়। এরপর থেকে জেলার প্রবেশপথে পুলিশের কড়া পাহারা বসানো হয়।

বাড়িতে ঈদ করতে প্রতিদিন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ গাইবান্ধায় ঢুকছে। ফলে এই দুই জেলা থেকে আসা মানুষই এখন গাইবান্ধার জন্য আতঙ্ক।

পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮০০ থেকে ৯০০ লোক গাইবান্ধায় এসেছেন। তাঁরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গোপনে এ জেলায় আসেন।

গতকাল সকালে গাইবান্ধা শহরের অদূরে বালাসি নৌঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যেও তিনটি নৌকা থেকে যাত্রী নামানো হচ্ছে। একেকটি নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন যাত্রী ছিলেন। সবাই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। কয়েকজন যাত্রী জানালেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিমপাড়ে গাইবান্ধার বালাসি নৌঘাট। পূর্ব পাশে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌঘাট। লকডাউনের মধ্যেও বালাসি-বাহাদুরাবাদ নৌরুটে প্রতিদিন যাত্রী পারাপার হচ্ছে। আগে বালাসি থেকে বাহাদুরাবাদ যেতে ভাড়া ছিল ১৫০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে চার গুণ বেশি ৬০০ টাকা।

নৌকায় আসা ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, তিনি ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সড়কপথে পুলিশের ঝামেলা বেশি। তাই নৌপথে এলেন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে নৌকায় আসা একই এলাকার আরেক পোশাকশ্রমিক বলেন, কর্মস্থল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে বাহাদুরাবাদ নৌঘাটে এসেছেন। এরপর নৌকায় পার হয়ে বালাসিতে নামলেন।

>

কেউ প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস কিংবা পিকআপ-ভ্যান ভাড়া করে আসছেন। সড়কপথে কড়াকড়ির কারণে বিকল্প হিসেবে নৌপথ ব্যবহা করা হচ্ছে।

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ বলেন, গোপনে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁরা রাতে ও ভোরে বালাসি ঘাটে নামছেন। ফলে লোক আসা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছে।

ফুলছড়ির ইউএনও আবু রায়হান দাবি করেন, আগে নৌপথে এসেছিলেন, এমন ১৬০ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এখন কেউ আসছেন না। তারপরও যাতে লোকজন আসতে না পারেন, সে জন্য নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

সড়কপথেও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত লোক গাইবান্ধায় আসছেন। তাঁরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ধরে গাইবান্ধায় ঢুকছেন। নামছেন গাইবান্ধা শহরের বাসস্ট্যান্ড, শাপলা মিল, সুখনগর, তিনমাইল এলাকায়। এসব এলাকায় প্রতিদিন রাতে ও ভোরে বিভিন্ন গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

শহরের শাপলা মিল এলাকার বাসিন্দা মামুন মিয়া বলেন, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন গাইবান্ধায় ঢুকছে। ফলে তাঁরা আতঙ্কিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদের জিলানী দাবি করেন, বাইরে থেকে লোকজন আসার কোনো সুযোগ নেই। গাইবান্ধার প্রবেশপথে কড়া পাহারা বসানো হয়েছে।