রোহিঙ্গা শিবিরে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

রোহিঙ্গা শিবিরে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। উখিয়ার মধুরছড়া বাজারে সম্প্রতি।  প্রথম আলো
রোহিঙ্গা শিবিরে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। উখিয়ার মধুরছড়া বাজারে সম্প্রতি। প্রথম আলো

কক্সবাজার শহর থেকে ৩৪ কিলোমিটার দক্ষিণে উখিয়ার কুতুপালং বাজার। সেখান থেকে পশ্চিম দিকে আরও সাত-আট কিলোমিটার গেলে মধুরছড়া আশ্রয়শিবির। ১০-১২টি উঁচু পাহাড়চূড়া ও ঢালুতে তৈরি আশ্রয়শিবিরে বসতি দেড় লাখ রোহিঙ্গার। এ শিবিরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক রোহিঙ্গা তরুণ।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শিবিরের কয়েকটি হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। অধিকাংশ রোহিঙ্গার মুখে নেই মাস্ক। দোকানদারদের অবস্থাও একই রকম। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার চর্চাও তেমনভাবে নেই রোহিঙ্গা শিবিরে।

অবশ্য রোহিঙ্গাদের ভাষ্য, মাস্ক বা গ্লাভসের মতো স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম তাদের এখনো দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. সামছুদ্দৌজা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারে মাস্ক দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে।

মধুরছড়ার ডি-৯ পাহাড়ে ত্রিপলের ছাউনিযুক্ত ছোট্ট ঘরে সাত সদস্য নিয়ে থাকেন নবী হোসেন (৪৫)। তিনি বললেন, ‘এ ঘরে গাদাগাদি করে আড়াই বছর পার করেছি। বাঁচামরা আল্লাহর হাতে।’ তাঁর কথা, মাস্ক পরলে গরম লাগে।

মধুরছড়া শিবিরের একটি দোকান মালিক মোহাম্মদ আলী (৪৫) বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও এনজিওকর্মীরা হাটবাজারে এসে দোকানপাট বন্ধ, লোকজনের চলাচল সীমিত করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু কেউ তা আমলে নিচ্ছেন না।’

একই পরিস্থিতি দেখা গেছে পাশের লম্বাশিয়া ও জুমশিয়া শিবিরে। প্রধান সড়কের দুই পাশে, শিবিরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন উপসড়ক ও গলিতে নির্মিত শত শত দোকানপাট ও বসতিতে কেউ মানছে না সামাজিক দূরত্ব।

রোহিঙ্গা শিবিরের ঘরগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো। একটি ঘরের কেউ করোনা আক্রান্ত হলে পাশের ঘরের লোকজনের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ঘনবসতির কারণে এখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাও কঠিন।

লম্বাশিয়া শিবিরের অন্তত দুই হাজার ঘরের আশপাশে উড়তে দেখা গেল শত শত লাল নিশানা। এসব ঘরে অন্তত আট হাজার রোহিঙ্গাকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে আনা হয়েছে ছয়-সাত দিন আগে। কিন্তু বহু রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক ছুটছেন। এক ঘরের শিশুরা অন্য ঘরে যাচ্ছে। ঘর ছেড়ে লোকজন পাশের সড়কে, দোকানে আড্ডা দিচ্ছে।

>

শিবিরে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই
এ পর্যন্ত আক্রান্ত ১৩ জন
হোম কোয়ারেন্টিনে সাড়ে ১০ হাজার রোহিঙ্গা

গতকাল পর্যন্ত ১৩ জন রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর জেলায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ২৫৫।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা প্রথম আলোকে বলেন, ৮ এপ্রিল থেকে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে লডকাউন চলছে। শিবিরে করোনা রোগী শনাক্তের পর সাড়ে ১০ হাজার রোহিঙ্গাকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে আনা হয়েছে। কিন্তু ঘনবসতির কারণে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যবিধির আওতায় আনা যাচ্ছে না।

নমুনা সংগ্রহ বাড়ানোর উদ্যোগ

সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার নমুনা পরীক্ষার জন্য আশ্রয়শিবিরে এখনো পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়নি। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাব থেকেই রোহিঙ্গাদের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৩০০।

আরআরআরসির কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী আবু তোহা এম আর এইচ ভুঁইয়া বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে পৃথক ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ চলছে। পাশাপাশি ১ হাজার ৯০০ শয্যার ১২টি আইসোলেশন সেন্টার তৈরির কাজ চলছে। ১৮ মে ৫০ শয্যার একটি আইসোলেশন সেন্টার চালু হয়েছে ক্যাম্প-৬-এ। এখন দৈনিক ২০-২৫ জনের নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে। তা গড়ে ৫০ জনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে।