৩৮ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ায় বিকল হয়ে পড়া কুষ্টিয়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র। গতকাল সকাল দশটায়। ছবি: তৌহিদী হাসান
কুষ্টিয়ায় বিকল হয়ে পড়া কুষ্টিয়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র। গতকাল সকাল দশটায়। ছবি: তৌহিদী হাসান

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে বিকল হয়ে পড়া কুষ্টিয়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এতে ৩৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছেন কুষ্টিয়া ও কুমারখালী শহরের অন্তত ৮০ হাজার গ্রাহক।

জানতে চাইলে আজ সকাল ৯টায় উপকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা থেকে প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, শ্রমিক ও যন্ত্রাংশ আনা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আজ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের বটতৈল এলাকায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে হঠাৎ বিকট শব্দে আগুন ধরে যায়। এ সময় জেলাজুড়ে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডব চলছিল। প্রচণ্ড ঝড় ও বাতাসে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছিল ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ততক্ষণে একটি বড় ট্রান্সফরমার পুরোপুরি ও আরেকটি আংশিক নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ে। আগুন লাগার কয়েক মিনিট আগে থেকেই কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর ওজোপাডিকোর ৮০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপকেন্দ্রে বিভিন্ন জেলা থেকে একাধিক প্রকৌশলী ও বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা সেখানে আসেন। সকাল ১০টায় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত ঘটনাস্থলে যান। সেখানে সবার সঙ্গে আলোচনা শেষে জানানো হয়, ট্রান্সফরমার মেরামত ও কিছু যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক করতে হবে। কিন্তু যন্ত্রাংশ ও শ্রমিক ঢাকা থেকে আনতে হবে। পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় ঢাকা থেকে যন্ত্রাংশ ও শ্রমিক আনা হয়। শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ৬০ জন শ্রমিক পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন।

এদিকে ৩৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় শহরের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের বেশির ভাগ বিদ্যুৎ পেয়েছেন। আশপাশের জেলাগুলোতেও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কুষ্টিয়া শহরের ৬৫ হাজার ও কুমারখালী শহরের ১৫ হাজার ওজপোডিকোর গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন রয়েছেন।

বিদ্যুৎ না থাকায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালসহ শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সমস্যা হচ্ছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, রোগীদের অন্ধকারের মধ্যে সেবা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে দুই দিন করোনো পরীক্ষা করানো সম্ভব হচ্ছে না।

শহরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, আবহাওয়া একেবারে স্বাভাবিক। তারপরও যন্ত্রাংশ মেরামত করতে এত দেরি হওয়ায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বহুতল ভবনের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। জেনারেটর দিয়ে সাময়িক বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করলেও বেশির ভাগ সময় দুর্ভোগে পড়ছেন। ফ্রিজে থাকা জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে। ইন্টারনেট সেবাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। এনএসরোডের মুদি দোকানদার আবদুল জববার বলেন, কয়েক দিন আগে ঈদের জন্য ৫ হাজার টাকার আইসক্রিম কিনেছিলেন। সবগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

ওজোপাডিকোর এক নির্বাহী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যুৎ নিতে ওজোপাডিকো প্রস্তুত। লাইন স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ না হওয়ায় গ্রাহকেরা ভোগান্তি পোহাচ্ছে।