বাউল রণেশ ঠাকুরকে বাদ্যযন্ত্র উপহার

বাউলশিল্পী রণেশ ঠাকুরের হাতে বাদ্যযন্ত্র ও উপহার তুলে দিচ্ছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির নেতারা। আজ শুক্রবার বিকেলে দিরাইয়ে রণেশ ঠাকুরের বাড়িতে। ছবি: প্রথম আলো
বাউলশিল্পী রণেশ ঠাকুরের হাতে বাদ্যযন্ত্র ও উপহার তুলে দিচ্ছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির নেতারা। আজ শুক্রবার বিকেলে দিরাইয়ে রণেশ ঠাকুরের বাড়িতে। ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে গানের আসরঘর পুড়ে যাওয়া বাউলশিল্পী রণেশ ঠাকুরকে বাদ্যযন্ত্র উপহার দিয়েছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি। পাশাপাশি জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর দেওয়া ১০ হাজার টাকাও এই বাউলের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মো. শামছুল আবেদীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ শুক্রবার বিকেলে দিরাই উপজেলা উজানধল গ্রামে রণেশ ঠাকুরের বাড়িতে গিয়ে এসব উপহারসামগ্রী ও অর্থ তুলে দেয়। উপহারসামগ্রীর মধ্যে ছিল একটি ভালো মানের দোতরা, এক জোড়া মন্দিরা, একটি ডপকি, একটি নোটবুক (খাতা) ও কলম।

উজানধল গ্রামেই বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের বাড়ি। রণেশ ঠাকুর বাউল করিমের শিষ্য। রণেশ ঠাকুরের ভাই প্রয়াত রুহি ঠাকুরও বাউলশিল্পী এবং করিমের শিষ্য ছিলেন।

গত রোববার রাতে রণেশ ঠাকুরের বাড়িতে তাঁর গানের আসরঘরটি আগুনে পুড়ে যায়। এটি ৭ হাত প্রস্থ ও ১৪ হাত লম্বা টিনের বেড়া ও টিনের চালার একটি ঘর ছিল। তবে তাঁর বসতঘরটি টিনের চালার পাকা ঘর। গভীর রাতে শব্দ শুনে তিনি বের হয়ে দেখেন আসরঘরে আগুন জ্বলছে। এই ঘরটিতে কেউ না থাকলেও এটিতে তাঁর কিছু বাদ্যযন্ত্র ও গানের খাতা ছিল। স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, এটি পরিকল্পিত। যারা নানা সময়ে শাহ আবদুল করিমকে তাঁর গানের চর্চায় বাধা দিয়েছে, তারাই রণেশ ঠাকুরের গানের আসরঘরে আগুন দিয়েছে।

আগুনের ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে দিরাই থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন রণেশ ঠাকুর। এরপর রাতেই উজানধল গ্রামের এলাম উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ আহমদকে (২৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

রণেশ ঠাকুর আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার তো কোনো শত্রু নেই। ঘরে কীভাবে আগুন লেগেছে, বা কে আগুন দিয়েছে, আমি দেখিনি। তবে মামলা এবং একজন গ্রেপ্তারের পর ওই পক্ষের লোকজন বিভিন্নভাবে আমার বিরুদ্ধে নানা কথা বলছে বলে আমি শুনেছি। এ কারণে কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মো. শামছুল আবেদীন বলেন, ‘যারা বাউলগান ও বাউল–দর্শনের বিরোধী, তারাই এই কাজ করেছে। প্রশাসনসহ আমরা সবাই রণেশ ঠাকুরের পাশে আছি। তাঁকে কেউ হুমকি দিয়ে পার পাবে না। যারাই এটা করবে, তাদের মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত।’

রণেশ ঠাকুরের হাতে উপহার তুলে দেওয়ার সময় অন্যদের মধ্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কান্তি দে, জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী, ভাটিবাংলা বাউল একাডেমি ও গবেষণা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক দুলন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।