করোনারোগীকে গভীর রাতে নেবুলাইজার পৌঁছে দিলেন তিনি

রিদুওয়ানুল হক (পিপিই পরা)। ছবি : সংগৃহীত
রিদুওয়ানুল হক (পিপিই পরা)। ছবি : সংগৃহীত

'আমার খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নেবুলাইজার ব্যবহার করতে বলেছেন। আমি এত রাতে নেবুলাইজার কোথায় পাব? কেউ কি আমায় একটা নেবুলাইজার জোগাড় করে দিতে পারবেন?'

মধ্যরাতে 'বাঁচার' এই আকুতি জানিয়ে ফেসবুকের 'করোনা আপডেট চিটাগং' নামের একটি গ্রুপে এ স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন করোনা-সংক্রমিত এক ব্যক্তি (নাম প্রকাশ করা হলো না)।

সেই স্ট্যাটাস দেখে আর বিছানায় শুয়ে থাকতে পারেননি রিদুওয়ানুল হক। তড়িঘড়ি করে উঠে মোটরসাইকেল নিয়ে সোজা ছুটলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানে। সেখান থেকে নেবুলাইজার নিয়ে যখন করোনায় সংক্রমিত রোগীর ঘরে পৌঁছে দিলেন, তখন রাত ২টা বেজে ৫ মিনিট।

এত রাতে এমন মানবিক সেবা পাবেন, কল্পনাই করেননি করোনা-সংক্রমিত ওই ব্যক্তি। নেবুলাইজ করার পর এখন তিনি সুস্থ।
রিদুওয়ানুল হক নামের ওই তরুণের কীর্তি একই ফেসবুক গ্রুপে তুলে ধরেন সেটির অ্যাডমিন তানভীর রনি।

সেই গ্রুপ ঘেঁটে দেখা যায়, প্রথমে শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে করোনা-আক্রান্ত ওই ব্যক্তি তাঁর করোনা পজিটিভ আসার কথা জানিয়ে সবার কাছে করণীয় জানতে চান। তানভীর রনি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের সঙ্গে ওই ব্যক্তির যোগাযোগ করিয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে রাত দেড়টার দিকে পুনরায় আরেকটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। সেখানে তিনি চিকিৎসক নেবুলাইজ করার পরামর্শ দিয়েছেন জানিয়ে একটা নেবুলাইজার জোগাড় করিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। মুহূর্তের মধ্যে প্রায় ২০০ জন মানুষ তাঁকে সহযোগিতা করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে সেই স্ট্যাটাসের নিচে মন্তব্য করেন। তাঁদের মধ্যে তানভীর রনি জাহেদুল ইসলাম নামের আরেক তরুণকে নেবুলাইজার কিনতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে পাঠান। তিনি নেবুলাইজার কেনার মুহূর্তে ওই আক্রান্ত ব্যক্তি জানান, অপরিচিত এক তরুণ এসে নেবুলাইজার দিয়ে গেছেন। তাই আর লাগবে না।
পরে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, সেই অপরিচিত তরুণ হলেন রিদুওয়ানুল হক।

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করেন রিদুওয়ানুল হক। মধ্যরাতে করোনা-সংক্রমিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে চট্টগ্রাম শহরের মানবিক মুখ হয়ে ওঠা এই তরুণের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। মোবাইলটা রাখব, এমন সময় চোখ পড়ে ব্যক্তির স্ট্যাটাসে। তারপর ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পরে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। তাঁর কাছে নেবুলাইজারটি পৌঁছিয়ে দিতে পেরে তৃপ্তি পাচ্ছি।'

এমন মানবিক সেবা পাওয়া ব্যক্তিটি কী বলছেন? কৃতজ্ঞতায় নুইয়ে পড়া কণ্ঠে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'যেখানে করোনা-সংক্রমিত শুনলেই আপন মানুষের কাছ থেকে নানা অবহেলার খবর পাচ্ছি চারপাশে, সেখানে সম্পূর্ণ অপরিচিত এই তরুণেরা আমার জন্য যা করলেন, তা অকল্পনীয়। এই সহযোগিতার কথা জীবনে ভুলব না।'

এর মধ্যেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে রিদুওয়ানুল হকের মানবিকতার গল্প। তাই বলে আবেগে ভেসে যাচ্ছেন না তিনি। উল্টো বলছেন, 'এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে না দাঁড়ালে কবে দাঁড়াব? করোনা-সংক্রমিত রোগীর কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন। দিন কিংবা রাত, ছুটে যাব আমি।'