চাল আত্মসাতের অভিযোগ করায় দুই যুবককে কুপিয়ে জখম

ছুরি
ছুরি

বরগুনার সদর উপজেলায় দুই যুবককে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের গর্জনবুনিয়া গণকবর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই দুই যুবকের পরিবারের দাবি, নলটোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ করায় চেয়ারম্যানের লোকজন তাঁদের কুপিয়ে জখম করেছেন।

জখম হওয়া দুই যুবক হলেন গর্জনবুনিয়া এলাকার মানিক ও আবদুল্লাহ। তাঁদের স্বজনেরা বলছেন, নলটোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কবীরের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। এতে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হন। চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাঁর লোকজন সন্ধ্যায় মানিক ও আবদুল্লাহর ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এতে তাঁরা আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহ বলেন, তিনিসহ মোট ৩০ জন জেলে নলটোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কবীরের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের বরাবর জেলেদের চাল আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যানের লোকজন তাঁদের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। হামলার সময় চেয়ারম্যানের ভাইয়ের ছেলে মিজান ও সোহাগ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মোটরসাইকেলের গতি রোধ করেই চেয়ারম্যানের অনুসারী শহীদ ও মুছা চাল চুরির অভিযোগ দিয়েছি কেন, এ কথা বলেই শহীদের নেতৃত্ব মিজান, সোহাগ, সোহেল, তানজিল, তুষার ও আরও কয়েকজন তাঁকে মারধর শুরু করেন। এ সময় তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে শহিদ ও মুছা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মানিককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন। এতে তিনিও আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্বজনেরা মানিক ও আবদুল্লাহকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে চিকিৎসকেরা মানিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক নীহার রঞ্জন বৈদ্য বলেন, মানিকের কাঁধ, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের জখম রয়েছে।

আহত আবদুল্লাহর অভিযোগ, চেয়ারম্যানের ইন্ধনে তাঁর ভাইয়ের ছেলে মিজান ও সোহাগের পরিকল্পনায় শহীদ ও মুছার নেতৃত্বে তাঁদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান গোলাম কবীর বলেন, 'আমার ভাইয়ের ছেলেরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না। ঘটনাটি মূলত মাদককেন্দ্রিক বিরোধে ঘটেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এ ঘটনাকে পুঁজি করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।'

বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

জেল প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগে জেলেরা বলেছেন, গত ২৯ মার্চ বরগুনা সদর উপজেলার ১০ নম্বর নলটোনা ইউনিয়নের জেলেদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। প্রত্যেক জেলেকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসে ৮০ কেজি চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রত্যেক জেলেকে ৩০ কেজি করে ৬০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলের দুই মাসের ২০ কেজি করে চাল চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করেছেন। জেলে তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁদের সবাই আবার চাল পাননি। প্রকৃত জেলেদের নাম বাদ দিয়ে যাঁরা মাছ শিকারের সঙ্গে যুক্ত না, তাঁদেরও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে অভিযোগটি তদন্ত করে ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।