ফেসবুকে বাবার ছবি দেখে আর শুধু কাঁদে ছেলেরা

প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন।
প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল-৪) দেলোয়ার হোসেন ১১ মে রাজধানীর মিরপুরের বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হন। পরে ওই দিনই বেলা ৩টার দিকে উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের একটি খালি প্লট থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

দেলোয়ারের স্ত্রী খোদেজা বেগম তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় শাহীন ও হাবিব নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে তাঁরা জানান, ওই দিন কর্মস্থলে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী আনিছুর রহমান (সহপ্রকৌশলী), তাঁর সহযোগী শাহীন ও মাইক্রোবাসচালক হাবিব। এর মধ্যে রূপনগর পার হয়ে বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছাতেই আনিছুরের নির্দেশে গলায় রশি পেঁচিয়ে টান দেন শাহীন। পরে তাঁর মুখ চেপে ধরেন আনিছুর। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করে তাঁর লাশ ফেলে দেওয়া হয় ১৭ নম্বর সেক্টরের একটি খালি প্লটে।

খোদেজাকে দেলোয়ার বিয়ে করেছিলেন ১৯৯৭ সালে। বিয়ের ২৩ বছর পার হয়েছে ইতিমধ্যে। মাঝে কোনো একদিন ফেসবুকের পাতায় এক যুগলকে ধুমধাম করে বিয়ের ৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করতে দেখেন তিনি। সেই থেকে স্ত্রী খোদেজাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন ৫০ বছর পাড়ি দেওয়ার। কথা ছিল, ৫০ বছর পূর্তিতেও তাঁরাও ধুমধাম আয়োজন করবেন। পুরো পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাবেন দূরে কোথাও। সেই থেকে স্ত্রীর অপেক্ষা দীর্ঘ হতে থাকে।

মৃত্যুর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন দেলোয়ার। সেখানে লিখেছিলেন, ‘আমার দুটো ভালো লাগার জায়গা আছে, যেখানে আমি বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারি। এর মধ্যে একটি বুয়েট ক্যাম্পাস, অন্যটি বাংলা একাডেমি। আজকে দ্বিতীয়টিতে এসেছি।’ স্ট্যাটাসের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন পুরো পরিবার নিয়ে ঘোরাঘুরির কিছু আনন্দঘন মুহূর্তের ছবি। স্ত্রী ও ছেলেরা সেই ছবিগুলো দেখে এখন আবেগ আপ্লুত হন। কান্নায় ভেঙে পড়েন বারবার।

বড় ছেলে মাসফিকুর সালেহীন বলেন, ‘বাবার কথা মনে পড়তেই আম্মু ভেঙে পড়েন, তখন আমি সান্ত্বনা দিই। আবার আমাদের খারাপ লাগলে আম্মু আমাদের সান্ত্বনা দেন। এভাবেই বেঁচে আছি।’