প্রকৌশলী দেলোয়ারের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা

প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন। ফাইল ছবি
প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন। ফাইল ছবি

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব খুনির সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শনিবার বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এক বিবৃতি দিয়ে বলছেন, ‘ঘুষের বিনিময়ে শতকোটি টাকার কাজের ফাইল ছাড়তে রাজি না হওয়ায় দীর্ঘ পরিকল্পনার পর নিজ গাড়িচালকের সহায়তায় প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্ত সংস্থার অনুসন্ধানে জানা গেছে। এ ঘটনা একটি অশনিসংকেত।’

বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, আইবি এবং সব প্রকৌশলী সংঘকে প্রকৌশলীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘যদি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হয়, তাহলে যাঁরা শত প্রতিকূলতার মুখেও নিজের সততা বজায় রেখে চলছেন, তাঁরা সাহস হারিয়ে ফেলবেন। যদি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হয়, তাহলে অসাধু-খুনি সিন্ডিকেট যাঁরা দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকাকে নিজের সম্পত্তি মনে করে আত্মসাৎ করতে চান, তাঁরা বেপরোয়া হয়ে যাবেন।’

দেলোয়ার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যদি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কীভাবে তাঁদের সন্তানদের সৎ থাকার উপদেশ দেবেন? যদি এই প্রভাবশালী দোষীরা শাস্তি না পান, তাহলে কীভাবে আমরা প্রতিবছর কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়া হাজার হাজার যুবক-যুবতী সৎপথে থাকার সাহস পাব? অসাধু চক্রের সামনে একা দেয়াল হয়ে দাঁড়ানো দেলোয়ার হোসেনের সততার গল্পকে হেরে যেতে দেবেন না। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে নেতৃত্ব দেবেন।’

দেলোয়ার হোসেন বুয়েট,৮৬ ব্যাচের একজন প্রকৌশলী। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সবার কাছে তিনি একজন সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

দেলোয়ার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সম্পর্কে তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল মুত্তাকীন প্রথম আলোকে শনিবার রাতে বলেন, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুজন আসামি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আরেক আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ডুবুরির সাহায্যে দেলোয়ারের মুঠোফোন উদ্ধার করা গেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

১১ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয় রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে।

বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁদের বিবৃতি বলেছেন, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের হত্যাকাণ্ড কেবল একজন প্রকৌশলীর প্রাণনাশ নয়, বরং এটি দেশের সব সেক্টরে সৎ ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত ভীতিকর এবং হতাশাজনক ঘটনা। যাঁরা ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হওয়ার পথে, তাঁদের জন্য একটা ঘৃণার বার্তা বহন করে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১১ মে মিরপুরের বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ভাড়া করা মাইক্রোবাসে নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাঁর সহকর্মী (সহকারী প্রকৌশলী) আনিছুর রহমান ওরফে সেলিম ও আনিছুরের দুই সহযোগী শাহিন ছিলেন। হাবিব মাইক্রোবাস চালাচ্ছিলেন। মাইক্রোবাসটি রূপনগর দিয়ে বেড়িবাঁধে ওঠার পর আনিছুর রহমানের ইশারায় শাহিন প্রকৌশলী দেলোয়ারের গলায় রশি পেঁচিয়ে টান দেন। তখন আনিছুরও চেপে ধরেন দেলোয়ারকে। এরপর দেলোয়ার নিস্তেজ হয়ে পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাকে পেটানো হয়। পরে দেলোয়ারের লাশ উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের খালি প্লটে ফেলে দেওয়া হয়।

সম্প্রতি প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার ভাড়াটে খুনি শাহিন ও মাইক্রোবাসের চালক হাবিব আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আর প্রকৌশলী দেলোয়ারের সহকর্মী সহকারী প্রকৌশলী আনিছুরকে গত বুধবার মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আনিছুরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। শাহিন ও হাবিব আদালতে জবানবন্দিতে বলেছেন, আনিছুর খুনের জন্য তাঁদের ভাড়া করেন। ঘটনার সময় আনিছুরও গাড়িতে ছিলেন এবং তাঁর নির্দেশেই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।