আম্পানে ঘের-পুকুর তছনছ, ক্ষতিপূরণের আশায় মাছচাষিরা

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভেসে গেছে ঘেরের মাছ। ঘেরের বিধ্বস্ত বাঁধ মেরামতে ব্যস্ত চাষি শাহাদাৎ। গতকাল শনিবার সকালে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কাজীর হাওলা গ্রামে। ছবি: শংকর দাস
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভেসে গেছে ঘেরের মাছ। ঘেরের বিধ্বস্ত বাঁধ মেরামতে ব্যস্ত চাষি শাহাদাৎ। গতকাল শনিবার সকালে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কাজীর হাওলা গ্রামে। ছবি: শংকর দাস

পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলার রাঙ্গাবালীর কাজীর হাওলা গ্রামের মাছচাষি শাহাদাৎ প্যাদার (৩৫)। তাঁর ১১ একর জমির ওপর মাছের ঘের। দুই মাস আগে তিনি পাঁচ লাখ টাকার বাগদা, শলা চিংড়ি, রুই, কাতলা, কোড়াল মাছের পোনা ছেড়েছিলেন ঘেরে। আর এক মাস পর ঘের থেকে মাছ উঠিয়ে বিক্রি শুরুর কথা ছিল। কিন্তু গত বুধবারের ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বাঁধসহ ভেসে গেছে সেই ঘেরের মাছ। মাছচাষি শাহাদাৎ এখন দিশেহারা হয়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় মৎস্য অফিসে ঘুরছেন।

শাহাদাৎ প্যাদার বলেন, ঘেরে মাছ চাষে পাঁচ লাখ টাকার পোনা ছাড়ার পর রক্ষণাবেক্ষণে আরও পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এক মাস পর এই ঘেরের মাছ অন্তত ৩০ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করা যেত। কিন্তু জলোচ্ছ্বাসে সব শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, রাঙ্গাবালীতে মাছচাষিরা প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার মাছ উৎপাদন করে আসছেন। সিডর, আইলার মতো বছর-বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাছচাষিদের নিঃস্ব করে দিয়ে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না।

শুধু শাহাদতের নয়, তাঁর মতো অনেকের রাঙ্গাবালীর প্রায় ৫০০ মাছের ঘের ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে যায়। এসব রক্ষায় সরকারি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। জেলা মৎস্য কার্যালয় জানায়, আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে জেলায় মোট ৬২৩টি মাছের ঘের ও ৫ হাজার ৭৫৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ৮ কোটি ৯৬ লাখর ক্ষতি হয়েছে।

গত শনিবার সকালে সরেজমিনে রাঙ্গাবালীর সদর ইউনিয়নের কাজীর হাওলা গ্রামে দেখা যায়, মাছের ঘেরগুলো ফাঁকা। ঘেরের বাঁধ বিচ্ছিন্ন হয়ে জোয়ারের সময় পানি ঘেরে উঠছে, আবার ভাটায় নেমে যাচ্ছে। মাছচাষি শাহাদাৎ লোকজন নিয়ে তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত ঘেরের বিধ্বস্ত বাঁধ মেরামত করছেন। এই ঘেরের কাছেই ওই গ্রামের আরেক মাছচাষি বাদল প্যাদারের (৪৫) ঘের। তিনি ২০ একর জমি নিয়ে মাছের ঘের করে প্রায় ৭ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির পোনা ছেড়েছিলেন। মাস খানিক পর অন্তত ৪০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পান তছনছ করে দিয়েছে সব। এখন সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ আশা করছেন তাঁরা।

বাদল প্যাদার বলেন, 'এমনিতেই করোনার কারণে পরিবহন সংকটে ঘের থেকে মাছ ধরা হচ্ছিল না। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সেই মাছও ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেল। ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না কেউ। ক্ষতিপূরণ না দিক, অন্তত ঘের রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধ দেওয়া হোক।'

রাঙ্গাবালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, সাগর মোহনায় জেগে ওঠা দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে মাছের ঘেরের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। জেলার সবচেয়ে বেশি মাছের ঘের এই রাঙ্গাবালী। এই উপজেলায় মাছের জন্য সুনামও রয়েছে।

পটুয়াখালীর মৎস্য বিভাগ জানায়, আম্পানে জেলার রাঙ্গাবালীতে ৫০০ ঘের ও কলাপাড়ায় ১২৩টি ঘেরসহ মোট ৬২৩টি ঘের জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫ হাজার ৭৫৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এ্যামদাদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, আসলে মাছচাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। বেড়িবাঁধের বাইরে ঘের করলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বাঁধ না থাকলে জলোচ্ছ্বাসে ঘের ক্ষতি হবেই। তাই ঘের রক্ষায় উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।