ঈদের আনন্দ নেই শাহ আলমের বাড়িতে

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির দলনেতা শাহ আলম মীরের পরিবারের সদস্যদের হাতে অর্থসহায়তা তুলে দেওয়া হচ্ছে। ছবি: নেছারউদ্দিন আহমেদ
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির দলনেতা শাহ আলম মীরের পরিবারের সদস্যদের হাতে অর্থসহায়তা তুলে দেওয়া হচ্ছে। ছবি: নেছারউদ্দিন আহমেদ

‘প্রত্যেক বছর ঈদের আগে আমারে নতুন কাপড় দেয়। পোলাপানরেও পছন্দমতো কাপড়-চোপড় দেয়। সেমাই-চিনি কিইন্যা আনে। বাড়িতে মানুষজন আয়। কত যে আনন্দ হইত। এইফির হেই আনন্দ আর নাই। এইফির মোগো ঈদই অইবে না।’

চোখের পানি ফেলতে ফেলতে কথাগুলো বলছিলেন সারভীন জাহান আঁখি। তিনি ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ইউনিটের দলনেতা শাহ আলম মীরের স্ত্রী। ঘূর্ণিঝড় আম্পান যে রাতে উপকূলে আঘাত হানে, সেদিন সকালে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা প্রচার করতে গিয়ে শাহ আলম মীর খেয়াডুবিতে নিখোঁজ হন। প্রায় সাত ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করেন।

রোববার শাহ আলম মীরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নির্বাক হয়ে বাড়ির প্রধান ফটকে বসে আছেন স্ত্রী সারভীন। পাশে বসা তাঁর মেজ ছেলে অনিক মীর ও ছোট ছেলে সিয়াম মীর। বাবার শোকে তারাও চুপ হয়ে গেছে। কারও মুখে কোনো কথা নেই। পুরো বাড়িতেই হারানোর বেদনা বিরাজ করছে।

স্বামীর কথা তুলতেই সারভীন জাহান বলেন, ‘ঝড়-বইন্যা আইলেই লোকটা গ্রামের মানুষের জীবন রক্ষায় ঝাঁপাইয়া পড়ত। হেই দিন কি লাইগ্যা জানি আমার মোনডা আনচান করছেলে। আমি ঘরে গোনে নামতে দেতে চাইছেলাম না। আমারে কয়, “তুমি ঘরে থাহো। আমারে কাজ করতে দেও।” এই কথা কইয়া সিপিপির পোশাক গায়ে লাগাইয়া, পায়ে গামবুট পইর‌্যা মেগাফোনডা লইয়া বাড়ি গোনে নাইম্যা গেল। হেই যে গেল আর ফির‌্যা আইলোনা।’

শাহ আলম মীরের পরিবারকে সিপিপিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। শনিবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) কলাপাড়া কার্যালয়ের পরিচালক মো. আছাদউজ্জামান খান এসব সহায়তার অর্থ তাঁর স্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এ সময় সিপিপির কলাপাড়া উপজেলা দলনেতা মো. মোতালেব হাওলাদার, কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোশারফ হোসেন, সিপিপির ধানখালী ইউনিয়নের দলনেতা গাজী আসাফউদ্দৌলাহ্ সোহেল, কেপিজেসির প্রতিনিধি গাজী রাইসুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

শাহ আলম মীরের স্ত্রী ও দুই সন্তান। ছবি: প্রথম আলো
শাহ আলম মীরের স্ত্রী ও দুই সন্তান। ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় মানুষজন ও বিভিন্ন সংগঠন শাহ আলমের কর্মকে অমর করে রাখার জন্য এলাকার একটি সড়ক অথবা যে কোনো একটি স্থাপনার তাঁর নামে করার দাবি জানিয়েছে। অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম কেপিজেসি শাহ আলম মীরের ছোট ছেলে, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম মীরের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা জানায়, এক সময় শাহ আলম মীর স্থানীয় বাজারে ছোট দোকান করতেন। অভাব-অনটনের কারণে সে দোকানটাও বিক্রি করে দেন। পরিবারের জন্য বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন, তা শোধ করতে পারেননি। তাঁর বড় ছেলে অভি মীর কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় গেছেন। মেজ ছেলে অনিক মীর ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন।

সিপিপি কলাপাড়া কার্যালয়ের পরিচালক মো. আছাদউজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহ আলম মীর জনসেবা করতে গিয়ে নিজের জীবন দান করেছেন। তিনি হলেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।’