অনাথ ভাইবোনের ঈদের খাবার ডাল-ভাত

হাতে টাকা-পয়সা নেই। ঈদের সেমাই-লাচ্ছা কিনতে পারেনি তারা। তাই ডাল-ভাতই হবে তাদের ঈদের দিনের খাবার। ঘরে বসে ডাল-ভাত খেয়েই কেটে যাবে ঈদ। ঈদের আগের দিন রোববার এমন কথাই জানিয়েছে অনাথ দুই-ভাইবোন।
হাতে টাকা-পয়সা নেই। ঈদের সেমাই-লাচ্ছা কিনতে পারেনি তারা। তাই ডাল-ভাতই হবে তাদের ঈদের দিনের খাবার। ঘরে বসে ডাল-ভাত খেয়েই কেটে যাবে ঈদ। ঈদের আগের দিন রোববার এমন কথাই জানিয়েছে অনাথ দুই-ভাইবোন।

হাতে টাকা-পয়সা নেই। ঈদের সেমাই-লাচ্ছা কিনতে পারেনি তারা। তাই ডাল-ভাতই তাদের ঈদের দিনের খাবার। ঈদের আগের দিন রোববার এমন কথাই জানিয়েছে অনাথ দুই-ভাইবোন। এই দুজন হলো রাজশাহীর বাগমারার গণিপুর ইউনিয়নের বুজরুককোলা গ্রামের আরিফা খাতুন (১৩) ও রায়হান হোসেন (১৫)। ঈদের আনন্দ বঞ্চিত মা-বাবাহীন এই দুই শিশু-কিশোর।

উপজেলার বুজরুককোলা গ্রামের আবদুল আলীর সন্তান তারা। সাত বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা রেহেনা বেগমের আশ্রয়ে ছিল তারা। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারতেন না রেহেনা বেগম। এরপর এখান-ওখান থেকে কিছু সংগ্রহ করে সন্তানদের দেখাশোনা করে আসছিলেন। বাবার অভাব খুব একটা বুঝতে দেননি সন্তানদের। দেড় বছর আগে তিনিও মারা যান। সেই থেকে একাবারে এতিম হয়ে যায় রায়হান হোসেন ও আরিফা খাতুন। জীবনসংগ্রামে নামতে হয় দুই ভাইবোনকে।

বাবার রেখে যাওয়া আধভাঙা ভ্যানের প্যাডেল কিছুদিন ঘুরালেও তা বেশি দিন পারেনি রায়হান। পরে পেশা পরিবর্তন করে শিশু বয়সে অন্যের পানবরজে কাজ করে নিজেরা চলত। এত কষ্টের মধ্যে চোখ ভরা স্বপ্ন তাদের। লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত হবে। এ জন্য শত কষ্ট করেও চালিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া। আরিফা খাতুন মচমইল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম এবং রায়হান হোসেন হাটগাঙ্গোপাড়া টেকনিক্যাল স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

গতকাল রোববার দুপুরে এই অনাথ দুই ভাইবোনের সঙ্গে দেখা হয় উপজেলা পরিষদ চত্বরে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদের কাছে এসেছিল কিছু চাল-ডাল নেওয়ার জন্য। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ছাড়াও চাল, ডাল ও কিছু নগদ টাকা দিয়েছেন ইউএনও। তা দিয়েই এবারের ঈদ করবে রায়হান ও আরিফা। তাদের ভাষ্য, নতুন পোশাক বা ভালো খাবার কিনতে পারেনি। এটা সম্ভবও নয়। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা তাদের ছাতা হিসেবে ছিলেন। মা মারা যাওয়ার পর থেকে অনাথ হয়ে গেছে তারা।

রায়হান হোসেন বলে, অনাথ হওয়ার পর থেকে অনেক কষ্ট করে খেয়ে-না খেয়ে বেঁচে আছে দুই ভাইবোন। এলাকার লোকজনের পানবরজে কাজ করে সে সামান্য মজুরি পায়। আর তার বোন প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে যে ভাতা পায় তা দিয়ে চলে যায় কোনোমতে।

আরিফা খাতুন বলে, 'ভাইয়ের আয় ছাড়াও স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন ম্যাডাম মাঝে মধ্যে সহায়তা করেন। পোশাক ও খাতা কলম কেনার জন্য টাকা দেন। এ ছাড়া মায়ের রেখা যাওয়া ছাগল বাড়িতে পালন করি। প্রতিদিন রান্না শেষ করে বিদ্যালয়ে যাই। ফিরে এসে রান্নাসহ সংসারের কাজ করতে হয়। এভাবে দেড় বছর ধরে চলছে আমাদের জীবন।' কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে বলে, মাঝে মধ্যেই অনাহারে থাকতে হয় তাদের। আরিফা জানায়, চোখে সমস্যার কারণে ঠিকমতো সে দেখতে পারে না। তবে সেটা মানিয়ে নিয়েই কষ্টে দিন কেটে যাচ্ছে।

ঈদের প্রসঙ্গ টানতেই দুই ভাইবোন জানিয়ে দেয়, ইউএনওর দেওয়া চাল-ডাল ঈদের দিন রান্না হবে। আর তা খেয়েই পার হবে ঈদ।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যা খোরশেদ আলম বলেন, অনাথ ভাইবোনদের বিভিন্ন সময় সরকারি সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আরিফা প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তার নামে ভাতা করে দেওয়া হয়েছে। তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম সত্যিই করুণ।

ইউএনও শরিফ আহম্মেদ বলেন, পল্লিকবি জসিম উদ্দিনের আসমানি কবিতার যে বাড়ির বর্ণনা রয়েছে, তা ওই দুই অনাথের বাড়িতে গেলেই দেখা যায়। তিনি প্রায় দুই মাস আগে ওই দুই ভাইবোনের জীবনসংগ্রাম ও দুর্ভোগের চিত্র দেখেছেন। মাঝে মধ্যে ডেকে তাদের সহায়তা করেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দুর্যোগ সহনীয় প্রকল্প থেকে তাদের বাড়ি করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।