কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় প্রাণ গেল হৃদয়ের

হৃদয়
হৃদয়

বরগুনায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় এক কিশোরের প্রাণ গেল। ঈদের দিন গতকাল সোমবার বিকেলে নদীর পাড়ে বেড়াতে গেলে সেখানে তাকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ফেলে রেখে যায় কয়েক কিশোর। আজ মঙ্গলবার সকালে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে মারা যায়। সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের গোলবুনিয়া এলাকায় পায়রা নদীর পাড়ে ঘটনাটি ঘটে।

নিহত কিশোরের নাম হৃদয় (১৫)। সে বরগুনা শহরের চরকলোনি এলাকার চাঁদশী সড়কের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। বরগুনা সরকারি টেক্সটাইল ও ভোকেশনালে ইনস্টিটিউটে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল হৃদয়।
হৃদয়ের মা ফিরোজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ১০টার দিকে হৃদয় মারা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী দুজন জানান, গোলবুনিয়া এলাকায় পায়রা নদীর পাড়ে ঈদের দিন বিকেল ৫টার দিকে ঘুরতে যায় হৃদয়। স্থানীয় এক যুবকসহ ১০-১২ জন কিশোর হৃদয়কে লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া দেয়। হৃদয় নদীর চর ধরে দৌড়ে পালাতে গিয়ে চোট লেগে লুটিয়ে পড়ে। এরপর তার ওপর হামলে পড়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। সে অচেতন হয়ে পড়লে হামলাকারীরা তাকে নদীর চরে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা হৃদয়কে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্তকর্তা নিহার রঞ্জন বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, হৃদয়ের মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা, বমি ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়ায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ সকালে তাকে বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এদিকে এ হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, নদীর পাড়ে বেশ কিছু যুবক হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে সাদা পায়জামা ও নীল পাঞ্জাবি পরা এক কিশোরকে ধাওয়া করছে অপর একদল কিশোর। একপর্যায়ে ধাওয়ার শিকার ওই কিশোর পা পিছলে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধাওয়া করা কিশোরেরা চারদিক দিয়ে ঘিরে তার ওপর হামলে পড়ে। লাঠি দিয়ে তাকে উপর্যুপরি পেটাতে থাকে। এতে গুরুতর আহত কিশোর অচেতন পড়ে থাকলে তাকে ফেলে হামলাকারীরা দক্ষিণ দিকে চলে যায়। নিহত কিশোর হৃদয়ের পরনেও এই রঙের কাপড়ই ছিল।

বরগুনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে মারা যাওয়ার খবর শুনে আমরা হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছি।’

গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রাস্তার ওপর রিফাত শরীফ নামে এক তরুণকে তাঁর স্ত্রী আয়েশার সামনে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে একদল সন্ত্রাসী। হাসপাতালে নেওয়ার পর রিফাত মারা যান। তখন সন্ত্রাসীদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে আয়েশার আপ্রাণ চেষ্টার একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এরপর সারা দেশে জানাজানি হয় বরগুনা শহরে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড নামের দুর্ধর্ষ এক সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে কিশোর ও তরুণদের নিয়ে গড়া বাহিনীর কথা। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কারও কারও পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা এই বাহিনীর নানা অপকর্মের খবরও গণমাধ্যমে বের হতে থাকে। ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড।

পুলিশ এই মামলার তদন্ত শেষে ২৪ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। আসামিদের মধ্যে একজন এখনো পলাতক, দুজন জামিনে এবং বাকি ২০ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। এই ২০ জনের মধ্যে ১২ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে।