দাফনের জন্য টাকা নিয়ে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছিল তিস্তায়!

লালমনিরহাটে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন সন্দেহে পোশাক কারখানার এক নারী শ্রমিকের লাশ নদীতে ফেলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মেয়েটির বাবার দাবি, তিনি এলাকায় লাশ দাফনের অনুমতি পাননি। এ অবস্থায় অন্যত্র দাফনের জন্য লাশবাহী এক গাড়িচালককে পাঁচ হাজার টাকা দেন। ওই ব্যক্তি লাশ দাফনের ব্যবস্থা না করে নদীতে ফেলে দেন।

মৃত ওই নারীর নাম মৌসুমী আখতার। তিনি পাটগ্রামের বুড়িমারীর গুচ্ছগ্রামের গোলাম মোস্তফার মেয়ে। রোববার রাতে আদিতমারী থানায় গিয়ে লাশটি শনাক্ত করেন তিনি। এর আগে সন্ধ্যায় আদিতমারী উপজেলার গোবরধন এলাকায় তিস্তা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ছয় মাস আগে পাটগ্রামের সরকারের হাটের আবুল কালামের ছেলে মিজানুর রহমানের সঙ্গে মৌসুমীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে মৌসুমী গাজীপুরে গিয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে ২১ মে ট্রাকে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন মৌসুমী। রংপুরের তাজহাট এলাকায় পৌঁছানোর পর ট্রাকচালক খেয়াল করেন, মৌসুমী মারা গেছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তারা লাশসহ ট্রাকটি জব্দ করে।

তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোকনুজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রাতে লাশসহ ট্রাকচালক ও ট্রাকটি থানায় আনা হয়। এরপর পরিচয় জেনে মেয়েটির পরিবারকে সংবাদ দেওয়া হয়। বাবা গোলাম মোস্তফা থানায় এসে লাশটি মৌসুমীর বলে শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্তের পর ব্যাগে ভরে লাশটি তাঁর জিম্মায় দেওয়া হয়।

গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, মেয়ের লাশ এলাকায় দাফনের জন্য তিনি স্থানীয় বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে ফোন করেন। কিন্তু চেয়ারম্যান এলাকায় লাশ দাফনের অনুমতি দেননি। উল্টো লাশ এলাকায় আনলে বাড়ি ও লাশসহ গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এমন পরিস্থিতিতে তিনি মেয়ের লাশ দাফনের জন্য লাশবাহী এক গাড়ির চালককে পাঁচ হাজার টাকা দেন। পরে লাশটি নদী থেকে উদ্ধারের পর খবর পান। তাঁর ধারণা, ওই গাড়িচালক লাশ দাফনের পরিবর্তে তিস্তা নদীতে ফেলে দিয়েছেন। তবে গাড়িচালকের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি গোলাম মোস্তফা।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে ফোন করেন এই প্রতিবেদক। এ সময় তিনি দাবি করেন, গোলাম মোস্তফার দাবি সত্য নয়। এলাকায় লাশ দাফনের অনুমতি না দেওয়া বা কোনো হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, গোলাম মোস্তফার মুখে সবকিছু শুনে তাঁরা ঘটনাটি পুলিশ সুপারকে জানান। তিনি আদিতমারী ও পাটগ্রাম থানা-পুলিশকে লাশটি যথাযথ মর্যাদায় দাফনের ব্যবস্থা করতে বলেন।

পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, সোমবার বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার কেন্দ্রীয় কবরস্থানে ওই নারী পোশাক শ্রমিকের লাশ দাফন করা হয়েছে।