ফেসবুক, টিভি, লুডু, ক্যারম, ঘুমই ভরসা!

‘জীবনে নতুন এক অভিজ্ঞতা হলো। ঈদের সময়টাতে এভাবে ঘরবন্দী কখনোই থাকিনি। আগে ঈদের দিন ও পরের কয়েক দিন আত্মীয়স্বজনদের বাসায় সপরিবার যেতাম, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। এখন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছি। ঈদের দিন সকাল আটটায় বাসার পাশের বায়তুল মামুর জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেছি। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মুসল্লিদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। ঈদের নামাজ আদায় শেষে এরপর ঘরে ঢুকেছি, আর বেরোইনি।’

কথাগুলো বললেন সিলেট নগরের পনিটুলা এলাকার বাসিন্দা এম ইয়াহিয়া বেগ মনোয়ার। তিনি জানান, স্ত্রী, সন্তানসহ নয় সদস্যের যৌথ পরিবার তাঁর। সবাই বাসাতেই রয়েছেন। অথচ অন্যান্য বছর ঈদ মানেই কত আনন্দ আর খুশি। এবার পরিবারের সদস্যরা টিভি দেখে আর ঘুমিয়ে অলস সময় পার করছেন। আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।
আজ মঙ্গলবার নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১৭ জনের সঙ্গে কথা হয়। সবারই একই অভিজ্ঞতা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কেউই বাসার বাইরে বেরোননি। কেবল ঈদের নামাজ আদায় করতে কেউবা মসজিদে গিয়েছেন। আবার কেউবা অ্যাপার্টমেন্টের নিচে অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা একত্রে নামাজ পড়েছেন। তবে নামাজ আদায় করতে গিয়েও সবাই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেছেন। এরপর থেকেই মূলত সবাই পুনরায় ঘরবন্দী হয়েছেন।

নগরের মিয়া ফাজিলচিশত এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম সেলিম। তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি। তিনি বলেন, ‘গতকাল বাসার অন্যান্য ফ্ল্যাটের ৮ থেকে ১০ জন বাসিন্দার সঙ্গে বাসার নিচে একত্রে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। ভিড় এড়ানোর জন্যই মসজিদে যাইনি। এরপর বাসাতে স্ত্রী-মেয়েসহ ঈদের আনন্দ ঘরোয়াভাবে উদযাপন করছি। টিভি দেখছি, ফেসবুকে সময় কাটাচ্ছি। আত্মীয়স্বজনদের কাছে যেতে পারছি না, কেউ আমাদের বাসায়ও আসতে পারছে না, এর চেয়ে অস্বস্তিকর কী হতে পারে? কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি মেনে নেওয়া ছাড়াও তো কোনো উপায় নেই।’

সোবহানীঘাট এলাকার গৃহিণী রোকশানা আক্তার। ৪৮ বছর বয়সী এ গৃহিণী জানান, অন্যান্য বছর ঈদের সময়টায় তিন থেকে চার দিন ধরে তাঁকে কমপক্ষে শতাধিক আত্মীয়স্বজনের জন্য সেমাই, পিঠাসহ নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করতে হতো। তাঁরা যেমন সপরিবার স্বজনদের বাড়িতে যেতেন, অন্যরাও তাঁদের বাসায় বেড়াতে আসতেন। কিন্তু এবার এর ব্যতিক্রম ঘটল। এবার আর পিঠা-সেমাই রান্না করতে হয়নি। জীবনে এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটল। কেমন যেন খাপছাড়া সবকিছু। তবে পরিবারের সবাই মিলে অবসর সময়টায় টিভি দেখে আর লুডু খেলে সময় কাটাচ্ছেন।

কয়েকজন তরুণ জানান, ঈদের সময়টাতে তাঁরা বন্ধুরা মিলে হইহুল্লোড় করে কাটান। এবার এতে ছেদ পড়ল। তাই ঘরবন্দী সময়ে ফেসবুকে ভিডিও কলে তাঁরা কথা বলছেন। চারজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি জানান, তাঁরা টিভি দেখার পাশাপাশি পরিবারের সবাই লুডু ও ক্যারাম খেলে সময় কাটাচ্ছেন। তবে বাসার তরুণেরা ফেসবুকেই বেশি সময় ব্যয় করছেন। প্রায় সবাই অভিন্ন কণ্ঠে জানিয়েছেন, করোনাকালে ফেসবুক, টিভি, লুডু, ক্যারাম, ঘুমই তাঁদের একমাত্র ভরসা।