'এমন ঈদ করতে হবে কখনো কল্পনাও করিনি'

' বাবা নেই। আমি একা হাসপাতালে। পরিবারের অন্য সদস্যরা বাসায়। এমন ঈদ করতে হবে কখনো কল্পনাও করিনি। গতকাল ঈদের দিন অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি। ফোনে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। হাসপাতাল থেকে সেমাই, পোলাউ, মাংসসহ ভালো খাবার দিয়েছে, তা খেয়েছি। এভাবেই ঈদের দিনটি পার করেছি।'

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে টেলিফোনে কথাগুলো বলে কলেজ পড়ুয়া ফাহমিদা পাঠান (১৭)। তার বাবা জাকির হোসেন পাঠান মে মাসের প্রথম সপ্তাহে (করোনা পজিটিভ– কোভিড–১৯) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তারপর থেকে শুরু হয় ফাহমিদা পাঠানের পরিবারের দুর্ভোগ। বাবা মারা যাওয়ার পর ফাহমিদার দুই বছর বয়সী ভাই ছাড়া সে নিজে, মা, ও অন্য ভাইবোনেরা করোনা পজিটিভ হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিল। গত ২০ মে করোনা পরীক্ষা নেগেটিভ আসায় মা ও অন্যরা হাসপাতাল থেকে বাসায় যেতে পারলেও ফাহমিদা ছাড়া পায়নি। তার প্রথম পরীক্ষা পজিটিভ এবং দ্বিতীয় পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসে। এখন আরেকটি পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এলেই ফাহমিদা হাসপাতাল ছাড়তে পারবে।

ফাহমিদা বললো,'বাবা বেঁচে থাকতে ঈদের দিন আমরা খুব মজা করতাম। বাবা ঈদের নামাজ থেকে ফেরার পর মায়ের হাতের রান্না সেমাই খেতাম। দুপুরে ভালো খাবার খেতাম। বিকেলে সবাই মিলে ঘুরতে বের হতাম। রাতে বাসায় ফিরে আবার সবাই মিলে গল্প করতাম। আর এবার...।'

১২ মে প্রথম আলোতে এই পরিবার নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ওই দিনই প্রতিবেদনটি নজরে আসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলামের। তিনি পরিবারটির পাশে দাঁড়ান।

ফাহমিদার ঈদ যতই খারাপ কাটুক, সে প্রথম আলো, মেয়র আতিকুল ইসলাম, হাসপাতালের চিকিৎসক এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। সে জানায়, মেয়র আতিকুল ইসলামের সহায়তায় হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ফিরেছে। কেরানীগঞ্জের বাড়ির মালিকের দুই মাসের ভাড়াও পরিশোধ করেছেন আতিকুল ইসলাম। ঈদেও মেয়রের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতিনিধি ফাহমিদাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন।

ফাহমিদা বলল,'প্রথম আলো, মেয়র স্যারসহ অন্যরা যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে করে আমরা এখন আর নিজেদের অসহায় ভাবছি না। আমরা এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত। প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই, প্রতিবেদনটি প্রকাশিত না হলে এত মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারতেন না। আর মেয়রের কাছ থেকে সরাসরি সহায়তা পাওয়া আসলেই অনেক বড় ব্যাপার।'