প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধির নামে এবার হত্যা মামলা

প্রথম আলোর পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি এ বি এম মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এবার হত্যা মামলা করা হয়েছে। গত রোববার আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগের কর্মী তাপস কুমার দাস হত্যার ঘটনায় এই মামলা করা হয়। মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভার মেয়র মো. জিয়াউল হকসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে তাপসের বড় ভাই পঙ্কজ কুমার দাস মামলাটি করেন।

এ বি এম মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, গণধর্ষণ, মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে ছয়টি মামলা দেওয়া হয়েছিল। আদালতে সব মামলা থেকেই তিনি বেকসুর খালাস পান।

আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় হওয়া মামলায় প্রথম আলোর প্রতিনিধি মিজানুর রহমানকে আসামি করায় পটুয়াখালী প্রেসক্লাব তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী শামসুর রহমান ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদক মুফতী সালাহউদ্দিন বলেন, প্রকৃত ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সাংবাদিকের কোনো দল বা গ্রুপের প্রতিহিংসার শিকার হওয়া স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বড় হুমকি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের নির্ভয়ে লেখার স্বাধীনতা দিয়েছেন, সেখানে সত্য কথা লিখতে গিয়ে মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া কারও কাম্য নয়। দ্রুত এই মামলা থেকে সাংবাদিক মিজানুরের নাম প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

মিজানুরকে আসামি করায় কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. হুমায়ুন কবীর, সাধারণ সম্পাদক এস এম মোশারফ হোসেন, কলাপাড়া রিপোর্টার্স ক্লাবের আহ্বায়ক মাঈন উদ্দীন আহমেদ, কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ এম মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাঈদ, কলাপাড়া মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি গৌতম হালদার, সাধারণ সম্পাদক ছগির হোসেনও নিন্দা জানিয়েছেন। একই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বাউফল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামানসহ অন্য সাংবাদিকেরা। তাঁরা বলেন, স্থানীয় রাজনীতির দুটি পক্ষের দীর্ঘদিনের বিরোধ নিয়ে মিজানুর এর আগেও বহুবার সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে একটি পক্ষ তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। আগেও হয়রানি করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এবারও তা-ই করা হয়েছে।

গত রোববার দুপুরে বাউফল পৌর শহরের ডাকবাংলোর সামনের সড়কে তোরণ নির্মাণ করা নিয়ে মেয়র জিয়াউল হক ও স্থানীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজের সমর্থিতদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে যুবলীগের কর্মী তাপস (৩৪) আহত হন। রাতে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ওই ঘটনা নিয়ে আজ মঙ্গলবার বাউফলে দুপক্ষ পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে। দুপুরে মেয়র জিয়াউলের পক্ষে পৌর ভবনের এ এফ এম নাসির উদ্দিন সভাকক্ষে মেয়রের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল লতিফ খান লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এতে বলা হয়, রোববার বাউফল থানা-সংলগ্ন জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর সামনে পৌরসভার উদ্যোগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা–সংবলিত ব্যানার স্থাপন করা হচ্ছিল। নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুকের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ সন্ত্রাসী এসে এতে বাধা দিয়ে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে মেয়র সেখানে যান। পের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বাউফল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য থানার কনফারেন্স রুমে বৈঠক শুরু হয়। এতে মেয়র ও নাজিরপুরের চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক চলাকালে কালাইয়া ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জন সন্ত্রাসী ফের গিয়ে ব্যানার স্থাপনে বাধা দেয়। পুলিশ লাঠিপেটা করে সে সময় পরিবেশ শান্ত করে। সে সময় তাপস কুমার দাস নামের একজন আহত হন। তিনি পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁরা তাপস হত্যার প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটন করে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

সাংসদের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার এবং নাজিরপুর ইউপির চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুক সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে তাপসের ভাই পঙ্কজ দাসও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকার নির্দেশনা ও সচেতনতামূলক ব্যানার টাঙানোর সময় মেয়র তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বাধা দেন। মেয়রের নির্দেশে সন্ত্রাসী বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে তাপস দাসসহ অন্তত ১৫ জন কর্মীকে আহত করে। এই খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারসহ নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তাঁরা।

জানতে চাইলে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাদীর টাইপ করা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। পরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারি, এই মামলায় একজন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে।’