দৌলতদিয়ায় আরও দুটি ঘাট বন্ধ, মানুষের ভিড়

সামাজিক দূরত্ব না মেনে ফেরিতে গাদাগাদি করে পার হচ্ছে মানুষ। আজ বুধবার, দৌলতদিয়া, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী। ছবি: প্রথম আলো
সামাজিক দূরত্ব না মেনে ফেরিতে গাদাগাদি করে পার হচ্ছে মানুষ। আজ বুধবার, দৌলতদিয়া, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী। ছবি: প্রথম আলো

পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে কর্মস্থলে ফেরা শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। এসব মানুষের ঢল নেমেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে। কিন্তু এখানকার ছয়টির মধ্যে চারটি ঘাটই বন্ধ থাকায় যানবাহন ও মানুষের ব্যাপক ভিড় তৈরি হয়েছে। করোনার ঝুঁকি উপেক্ষা করে গাদাগাদি করে পার হচ্ছে মানুষ।

আজ বুধবার সকাল থেকেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া ঘাটে মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগতসহ পণ্যবাহী গাড়ি ভিড়তে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের চাপ। একপর্যায়ে দুপুরের পর থেকে ছোট গাড়ির প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা সারি তৈরি হয়।

যশোর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাচ্ছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঘাটের ভিড় এড়াতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে খুব সকালে রওনা হয়েছিলাম। ঘাটে পৌঁছে দুই ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার মতো শতাধিক ছোট গাড়ি এভাবে অপেক্ষা করছে।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়ায় ছয়টি ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে গত বর্ষায় বিলীন হওয়ার পর থেকে ১ নম্বর ঘাট চালু হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৬ নম্বর ঘাটটিও গত বর্ষার পর থেকে বন্ধ। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারী বৃষ্টিতে ৩ ও ৫ নম্বর ঘাটের র‍্যাম তলিয়ে গেছে। এতে এ দুটি ঘাটও বন্ধ হয়ে গেছে। ২ নম্বর ঘাট চালু থাকলেও দূরে হওয়ায় সেখানে ফেরি কম ভিড়ছে। এ অবস্থায় ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে বেশির ভাগ যাত্রী ও গাড়ি ফেরিতে ওঠানামা করছে। এতে মানুষ সামাজিক দূরত্ব না মেনে ফেরিতে ওঠানামা করছে।

আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা যায়, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঘাটে ছুটছে মানুষ। অনেকে ভাড়ায় ছোট গাড়িতে করে এসেছেন। তাঁরা গাদাগাদি করে ফেরিতে উঠছেন। ৫ নম্বর ঘাটের সোজায় সংযোগ সড়ক থাকায় এ পথে ছোট গাড়ির প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা সারি তৈরি হয়।

ঘাটে ওঠার লম্বা সারি। আজ বুধবার, দৌলতদিয়া, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী। ছবি: প্রথম আলো
ঘাটে ওঠার লম্বা সারি। আজ বুধবার, দৌলতদিয়া, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী। ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘জীবনের তাগিদে ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। কাল বৃহস্পতিবার থেকে অফিস খোলা। তাই আজকে সকালে রওনা হয়েছি। ঘাটে এসে প্রচণ্ড ভিড় দেখে তো মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’

ঢাকা থেকে যশোরে গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ফিরছিলেন নুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে ফেরিঘাটে মানুষের ভিড় দেখে আসিনি। তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ঈদের পর যাব। কিন্তু ঈদ পার হতে না হতেই ফের ভিড় শুরু হয়েছে। সকালে রওনা দিয়ে দুপুর বারোটার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে আসি। সেখানে ভিড় সামলে ছোট ফেরিতে চড়ে নদী পাড়ি দিতে হয়েছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মাহাবুব আলী সরদার বলেন, ৫ নম্বর ঘাটের র‍্যাম পাশে স্থানান্তর করা হচ্ছে। বিকেল নাগাদ সেটি চালু করা যাবে। ৩ নম্বর ঘাটটি হয়তো কাল স্থানান্তরের কাজ শুরু হবে। এখন ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার হচ্ছে। এ জন্য ৬টি ফেরি চালু রয়েছে। ঘাটস্বল্পতার কারণে ফেরি বাড়ানো যাচ্ছে না।