হাসপাতালের ফটকে সন্তান প্রসবের ঘটনা তদন্ত করবে দুটি কমিটি

ভর্তি হতে না পেরে হাসপাতালের প্রধান ফটকের পাশেই এক নারীর সন্তান প্রসবের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। গাইবান্ধা সিভিল সার্জন একটি এবং সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অপর কমিটিটি গঠন করেছেন।

ঈদের দিন বিকেলে সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, একজন নার্সের অবহেলায় প্রচণ্ড প্রসবব্যথায় কাতরালেও অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। এমনকি কোনো পরীক্ষা ছাড়াই তাঁকে গাইবান্ধায় নিয়ে যেতে বলেন নার্স। সেখান থেকে বেরিয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটকে যেতেই সন্তান প্রসব করেন ওই নারী।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম মণ্ডল জানান, এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) শামীমা বেগমকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুরঞ্জন কুমার ও চিকিৎসক রিনা আকতার। এক সপ্তাহের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এ বি এম হানিফ জানান, তিনি সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফাকে প্রধান করে অপর একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। কমিটির সদস্যরা হলেন সদরের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডায়না সরকার ও পাবলিক হেলথ নার্স মাসুমা খাতুন। এই কমিটিও এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঈদের দিন বিকেলে সাদুল্যাপুরের জামুডাঙ্গা গ্রামের রাশেদা বেগমের (৩৫) প্রসবব্যথা ওঠে। তাঁর স্বামী দরিদ্র বাদশা মিয়া তাঁকে ভ্যানযোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে দায়িত্বরত নার্স বাসনা রানী কোনো পরীক্ষা না করেই তাঁকে গাইবান্ধায় নিয়ে যেতে বলেন। বাদশা মিয়া তারপরও তাঁর স্ত্রীকে ভর্তি করে নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু নার্স তাতে কর্ণপাত করেননি। নিরুপায় হয়ে গাইবান্ধায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আবার ভ্যানযোগে স্ত্রীকে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন বাদশা মিয়া। এ সময় রাশেদা ব্যথায় চিৎকার করতে থাকেন। পথে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ফটকেই এক ছেলেসন্তান প্রসব করেন তিনি। পরে বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে নেয়। বর্তমানে নবজাতক ও প্রসূতি সুস্থ আছেন।

এ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে সে সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক মিঠুন কুমার বর্মণ দাবি করেন, নারী রোগী হওয়ায় তিনি তাঁকে দেখেননি। কর্তব্যরত নার্স বাসনা রানী ওই রোগীকে দেখেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ থাকায় তাঁকে গাইবান্ধায় স্থানান্তর করেন নার্স।

নার্স বাসনা রানীর দাবি, ওই নারীর সন্তান প্রসবের জন্য বাড়িতেও চেষ্টা করা হয়েছিল। রোগীর অবস্থা খারাপ ছিল। এ জন্য তাঁকে গাইবান্ধায় নেওয়ার কথা বলেন তিনি।