ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে দিনে দুবার প্লাবিত হয় লোকালয়

জোয়ারের পানির তোড়ে বেড়িবাঁধের একাংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সম্প্রতি বরগুনা সদর উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
জোয়ারের পানির তোড়ে বেড়িবাঁধের একাংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সম্প্রতি বরগুনা সদর উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাত এখনো সামলে উঠতে পারেনি উপকূলের মানুষেরা। আম্পানের পর থেকে জোয়ারের সময় ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে ভাটার সময় বের হয়ে যাচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে উঁচু জোয়ার আর বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্দশার শেষ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বরগুনা জেলায় ২১ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পাথরঘাটা, তালতলী, বরগুনা সদর, আমতলী উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দুর্যোগে বেশি ভাঙে। বাঁধ ভেঙে ২৫০ হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। এতে ৩ হাজার ৪৫ জন কৃষক ফসল হারিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ১৩১টি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, প্রতিবছর ভাঙা বাঁধ সংস্কার করা হয়। কিন্ত ছয় মাসের মাথায় এই সব বাঁধ আবারও ভেঙে যায়। নিম্নমানের কাজের কারণে বারবার বাঁধ ভেঙে যায় বলে জানান তাঁরা।

আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার গুলিশাখালী, বাটের চর পাতাকাটা এলাকার এক কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধের এক তৃতীয়াংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এই ভাঙা অংশ জরুরি সংস্কার না করলে পরবর্তী পূর্ণিমার জোয়ারে বাকি অশংটুকু ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গুলশিখালী গ্রামের বাসিন্দা খাইরুল আলম বলেন, প্রতিবছর বাঁধ সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। লোক দেখানো কাজ করে ঠিকাদারেরা। এর সঠিক তদারক করেন না। প্রতিবছর ঝড়–বন্যায় যখন বাঁধ ভাঙে, সে সময় সবার টনক নড়ে। এরপর আর খবর থাকে না।

জয়ালভাঙা গ্রামের ইসমাইল নামের এক বাসিন্দা বলেন, জয়ালভাঙা থেকে নিশানবাড়িয়া তেতুলবাড়িয়া পর্যন্ত বাঁধ নাজুক অবস্থায় আছে। জোয়ারের পানি বাড়লেই ঘরদুয়ার সব ভেসে যায়। প্রতিদিন জোয়ারে ঘর বাড়িতে পানি ঢোকে। বন্যার সাত দিন পরও বাঁধ মেরামত শুরু হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ভাঙা বাঁধ জরুরি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়া উপকূলের বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য টেকসই বাঁধ নিমার্ণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়ছে। সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আশা করছে, দ্রুত বরাদ্দ পেয়ে যাবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির পুনর্বাসন করা হবে। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের তালিকা করা হয়েছে। তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।