'ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই'

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার টগরা গ্রামে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার টগরা গ্রামে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার কচা ও বলেশ্বর নদের তীরে টগরা গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে গ্রামটির সোয়া তিন কিলোমিটার বাঁধের এক কিলোমিটার ভেঙে গেছে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে গ্রাম। আবার ভাটায় পানি নেমে যায়। প্রায় সাড়ে তিন শ পরিবার জোয়ার-ভাটার এই খেলায় পর্যুদস্ত।

ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকে ভাঙা বাঁধ নিয়ে বছরের পর বছর ধুঁকছে এই গ্রামের মানুষ। জোয়ারের পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে যেত। এক বছর আগে নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বাঁধটি আবার ভেঙে গেল। এখন জোয়ারে ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে।

টগরা গ্রামের বাসিন্দা মো. সুমন তালুকদার বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় চলাফেরা করতে কষ্ট হচ্ছে। আমরা ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই।’

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার মঠবাড়িয়া ও ইন্দুরকানি উপজেলায় আম্পানের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে ১৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে জেলার উপকূলীয় ১২টি গ্রামে জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢোকে। এরপর থেকে জোয়ারের পানিতে গ্রামগুলো প্লাবিত হচ্ছে। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাসে ৬ হাজার ৪৩০টি পুকুর ও ৩২৪টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। রবিশস্য, কলার বাগান, আউশের বীজতলারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, জেলায় ২৯৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে মঠবাড়িয়ায় ১৪০ কিলোমিটার ও ইন্দুরকানি উপজেলায় ৯৪ কিলোমিটার রয়েছে। মঠবাড়িয়ার খেজুরবাড়িয়া থেকে বড়মাছুয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৫০০ মিটার বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া চর ভোলমারা, কচুবাড়িয়া ও খেতাছিড়া গ্রামের বাঁধ আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইন্দুরকানির চন্ডীপুর গ্রামের দেড় কিলোমিটার ও টগরা গ্রামের এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিনে দেখা গেছে, মঠবাড়িয়ার খেতাছিড়া, কচুবাড়িয়া, চর ভোলমারা, মাঝেরচর, ইন্দুরকানির টগরা, চারাখালী, কালাইয়া, কলারণ, চর বলেশ্বর, চণ্ডীপুর, খোলপটুয়া ও সাউদখালী গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধের অন্তত ১৫ থেকে ১৭টি স্থান জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে গেছে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে রবিশস্য ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

মঠবাড়িয়ার খেতাছিড়া গ্রামের গৃহবধূ লাকী বেগম (২৮) বলেন, ‘বইন্নার রাইতে জোয়ারের তোড়ে গাঙ্গ পাড়ের বাঁধ ভাইঙ্গা ঘরবাড়ি তলাইয়া গেছিল। এহন জোয়ার আইলে ভাঙা বাঁধ দিয়া পানি বাড়ি ডুইক্যা ঘর তলায়। ঘরের মধ্যে ইট দিয়া রান্দাবাড়া হরি।’

ইন্দুরকানি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম মতিউর রহমান জানান, তাঁর উপজেলায় আম্পানে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া স্টিমারঘাট এলাকায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। এ ছাড়া বলেশ্বর নদের তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইন্দুরকানির টগরা গ্রামে সোয়া তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ১ কোটি ৩৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বাঁধের এক কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।