বাল্যবিবাহ থেকে বাঁচাতে ইউএনওর কাছে আবেদন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেতে অবশেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত আবেদন করেছে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী (১৩)। ওই ছাত্রী উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বাসিন্দা।

গতকাল বুধবার বিকেলে সে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত এ আবেদন করে।

কিশোরীটি এখন তার চাচার বাড়িতে রয়েছে। কিশোরীটির বাবা বিদেশে থাকেন।

ওই ছাত্রী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলে, ‘টিঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত পিইসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছি। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মা আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছেন। বাবার নির্দেশে আমি বাল্যবিবাহ থেকে বাঁচতে চাচার বাড়িতে চলে এসেছি। কিন্তু এখানেও পুলিশ পাঠিয়ে আমাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ বিয়ে থেকে রক্ষার জন্য আবেদন করেছি। শিশু বয়সে বিয়ে নয়। আমি পড়তে চাই। আমাকে বাল্যবিবাহ থেকে বাঁচান।’

এদিকে মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে বলে কিশোরীটির মা গত মঙ্গলবার থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগটি নথিভুক্ত না হলেও আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ কিশোরীটির বাবার দিকের দুই আত্মীয়কে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

কিশোরীর মা আজ থানা চত্বরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েকে বিয়ে দেব না। চাচারা জিম্মি করে ফেলেছেন। তাকে উদ্ধারের জন্য থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’

এদিকে কিশোরীর প্রবাসী বাবা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে না জানিয়ে গোপনে আমার বড় মেয়েকে ডাকাতের কাছে বিয়ে দিয়েছে স্ত্রী। এ বিষয়ে ঝগড়া করে সে বাবার বাড়িতে চলে গেছে। এখন আরেক ডাকাতের কাছে আমার শিশুকন্যাটাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমি দিচ্ছি না। আমার মেয়েকে কেউ অপহরণ করেনি। আপনারা দয়া করে আমার কন্যাশিশুটিকে বাঁচান।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এস এম মোসা সামিয়ার আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হয়েছে।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এম এম নাজমুল আহমেদ রাত সাড়ে নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে কিশোরীটিকে থানায় নিয়ে আসা হয়। কিশোরীর মা ও চাচাকে আনা হয়েছে। কিশোরীটি মা বিয়ে দিয়ে দেবেন, এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে মায়ের কাছে ফিরতে চাইছে না। প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, এটি অপহরণ নয়। তাই আটক দুই ব্যক্তি ও চাচাকে আজ রাতে বা কাল সকালে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর মা-মেয়েকে রাতে থানায় নারী পুলিশের হেফাজতে রাখা হবে। কাল কিশোরীটিকে আদালতে তোলা হবে।