ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২ ইউপি চেয়ারম্যান ও ১ সদস্য বরখাস্ত

প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও এক সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা হলেন বিজয়নগরের বিষ্ণুপুর ইউপির চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া এবং নবীনগরের বীরগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান কবির আহমেদ ও এই ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তাহের মিয়া।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ওই তিনজনের বিরুদ্ধে সরকারি নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীর তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তাঁদের দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয়। তাই স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯–এর ৩৪ (১) ধারা অনুযায়ী তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হতদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবারকে মুঠোফোনে ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ঈদ উপহার হিসেবে নগদ আড়াই হাজার করে টাকা সহায়তা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭৫ হাজার পরিবারকে এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৫ হাজারের বেশি পরিবারের কাছে সহায়তার টাকা পৌঁছেছে। এই তালিকা তৈরিতে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ঘটনা তদন্ত করে। এতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। এর পর আজ দুপুরে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে তাঁদের সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বীরগাঁও ইউনিয়নে ৫০৯ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকায় চেয়ারম্যান কবির আহমেদ তাঁর ও একাধিক ইউপি সদস্যের পরিবারের সদস্য, স্বজন, ঘনিষ্ঠজনসহ ৯৩ জন বিত্তবান ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। এ ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন সরকার ১৯ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ২০ মে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হাসান ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পারভেজ আহমেদ তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করেন। ইউএনও ২১ মে প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান।

একই সূত্রে জানা যায়, বিষ্ণুপুরের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন ভূঁইয়া ইউপি সদস্যদের সম্মতি ছাড়াই তালিকা তৈরি করেন। এতে প্রতি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ৫০ জনের নাম থাকার কথা। কিন্তু চেয়ারম্যানের নিজের গ্রাম তিলকিয়ার ৫৭ জনসহ এ ওয়ার্ডের ১০৮ জনের নাম তালিকাভুক্ত করেন। এতে চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ১ নম্বর ওয়ার্ডের সেন্টু মিয়ার ১৫ স্বজন, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাহের মিয়ার দুই ভাই, স্ত্রীসহ পরিবারের ৮ জন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যের স্ত্রী ও দুই মেয়ে, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদা বেগমের মেয়ে, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মেহেদী হাসানের স্ত্রী, বোন, চাচাসহ ১০ জন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কেদারখোলা গ্রামের সচ্ছল পরিবারের ১০ জনসহ চেয়ারম্যানের ফুফাতো ভাই ও তাঁর পরিবারের ১২ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খান ওই তিনজনের সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।