ভার্চ্যুয়াল কোর্টের ১০ কার্যদিবসে ৩৩২৮৭ আবেদন নিষ্পত্তি, জামিন ২০৯৩৮

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিভিন্ন মামলায় সারা দেশের অধস্তন আদালত থেকে ১০ কার্যদিবসে ২০ হাজার ৯৩৮ জন জামিন পেয়েছেন। ১১ মে থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল আদালতে ভার্চ্যুয়াল কার্যক্রমের দশম দিন। 

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের তথ্যমতে, দশম কার্যদিবসে গতকাল বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সারা দেশের অধস্তন আদালতে বিভিন্ন মামলায় ৩ হাজার ৮২টি জামিন আবেদনের নিষ্পত্তি হয়, যেখানে ১ হাজার ৪৭৭ জনের জামিন মঞ্জুর হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে জানান, সারা দেশের অধস্তন আদালতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০ কার্যদিবসে ৩৩ হাজার ২৮৭টি জামিন আবেদনের শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়। সব মিলিয়ে ১০ কার্যদিবসে অধস্তন আদালত থেকে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে শুনানির মাধ্যমে ২০ হাজার ৯৩৮ জন জামিন পেয়েছেন।
ভার্চ্যুয়াল-পদ্ধতি, বিচার বিভাগের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়
করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটির সঙ্গে মিল রেখে আদালতেও ২৬ মার্চ থেকে ছুটি শুরু হয়। সাধারণ ছুটির মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানো হয়। আর আদালতের ছুটিও বাড়ে। সর্বশেষ ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর আগে উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে ৯ মে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ শিরোনামে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। ফলে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়।

এর আগে ৭ মে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ওই সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে সেদিন জানান মন্ত্রিপরিষদের সচিব। অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে ভিডিও কনফারেন্সিংসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বিচার কার্যক্রম করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে ২৪ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানানোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয় বলে সভাসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছিল।

অধ্যাদেশ জারির পরদিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারঘোষিত ছুটি ও অবকাশকালে অধস্তন আদালতে শুধু জামিনসংক্রান্ত বিষয়গুলো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়। সরকারঘোষিত ছুটি ও অবকাশকালে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগের পৃথক চারটি বেঞ্চ গঠন করে দেন। এর পাশাপাশি চেম্বার বিচারপতি হিসেবে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানকে মনোনীত করা হয়। এরপর ১১ মে থেকে আদালতে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে কার্যক্রম শুরু হয়, যার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ নতুন এক অধ্যায়ে যাত্রা শুরু করে।