২৫ বছর গোয়ালে কাটিয়ে অবশেষে অভিলাষীর ঠাঁই হলো আপন ঘরে

অভিলাষী বেগমকে নতুন ঘরে তুলে দেন ইউএনও ফাহমিদা হক। আজ শুক্রবার চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নবকলস গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
অভিলাষী বেগমকে নতুন ঘরে তুলে দেন ইউএনও ফাহমিদা হক। আজ শুক্রবার চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নবকলস গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

৫০ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর এসে উঠেছিলেন বাবার বাড়িতে। বাবাও আর তত দিনে বেঁচে নেই। বসবাস শুরু করেন ভাইদের সংসারে। ভাই মারা যাওয়ার পর ঠাঁই হয় ভাতিজাদের ঘরে। কিন্তু কয়েক বছর যাওয়ার পর তাঁকে গোয়ালঘরে পাঠিয়ে দেন ভাতিজারা। খেয়ে না খেয়ে সেখানেই জীবনের প্রায় ২৫টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন বৃদ্ধা অভিলাষী বেগম।

এখন তাঁর বয়স ১০০ বছর। অসুস্থ অভিলাষী কথা বলতে পারেন না, শোনেনও না তেমন কিছু। দৃষ্টিশক্তিও ঝাপসা, একা দাঁড়াতে পারেন না। ত্রাণ দিতে গিয়ে তাঁর এমন করুণ অবস্থার কথা জানতে পারেন এলাকার কিছু তরুণ। খবর চলে যায় চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে। অবশেষ ইউএনওর উদ্যোগে একটি থাকার ঘর পেয়েছেন অভিলাষী বেগম। সঙ্গে একটি চৌকি, তোশক, চাদর, মশারি ও খাদ্যসামগ্রীও তাঁকে দেওয়া হয়েছে।

ইউএনওর কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিলাষী বেগমের পৈতৃক বাড়ি উপজেলার নবকলস গ্রামে। স্বামীর বাড়ি চাঁদপুরের বিষ্ণুপুর গ্রামে। স্বামী ও বাবা মারা গেছেন প্রায় ৫০ বছর আগে। স্বামীর মৃত্যুর পর চলে আসেন বাবার বাড়িতে। দুই ভাইয়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। কয়েক বছর পর তাঁরা মারা গেলে ভাতিজাদের ঘরে থাকেন। কিছুদিন পর তাঁকে ঘরে রাখতে অপারগতা জানান তাঁরা। এরপর ঠাঁই হয় সেখানকার একটি গোয়ালঘরে। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, স্বজনদের কেউই তাঁর খোঁজ নেননি। জনপ্রতিনিধিরাও এড়িয়ে গেছেন বিষয়টি। খেয়ে না খেয়ে সেখানেই কেটেছে তাঁর ২৫ বছর। তাঁর নামের পৈতৃক সম্পত্তিও দেওয়া হচ্ছে না।

নতুন ঘরে শুয়ে আছেন অভিলাষী বেগম। আজ শুক্রবার চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নবকলস গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
নতুন ঘরে শুয়ে আছেন অভিলাষী বেগম। আজ শুক্রবার চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নবকলস গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

ইউএনও ফাহমিদা হক জানান, কয়েক দিন আগে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে শতবর্ষী ওই বৃদ্ধার করুণ অবস্থা চোখে পড়ে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী মো. হাবিব, মো. তানভীর ও সুমনের। তাঁরা বিষয়টি তাঁকে জানান। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই বৃদ্ধার বাড়িতে যান তিনি। প্রশাসন ও তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই রাতেই তাঁর জন্য সেখানে একটি দোচালা টিনের ঘর বানিয়ে দেন। কিনে দেন একটি চৌকি, তোশক, চাদর ও মশারি। সঙ্গে কিছু খাবার ও কয়েক দিনের খাদ্যসামগ্রীও দেন। বয়স্ক ভাতার কার্ডও করে দেন।

ইউএনও জানান, বৃদ্ধার যত্নে যাতে কোনো ত্রুটি না হয় সে জন্য তাঁর ভাতিজাদের বলা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকেও এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর নামে কোনো সম্পত্তি আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই ওই বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এ রকম একজন অসহায় মানুষের খোঁজ কেউই নিচ্ছেন না, তা খুবই দুঃখজনক।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মামুন মৃধা জানান, তিনি জানতেন না ওই বৃদ্ধা এত বছর ধরে এ অবস্থায় আছেন। এখন থেকে তাঁর খোঁজখবর নেবেন।

বৃদ্ধার ভাইয়ের ছেলে শাহ আলম প্রধান বলেন, ঘরে প্রসাব-পায়খানা করায় তাঁর ফুফুকে সেখানে রাখা হয়েছে। এখন থেকে তাঁর যত্ন নেবেন। ফুফুর সম্পত্তি তাঁর বাবা ও চাচা বিক্রি করে গেছেন।

‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনের মতলব দক্ষিণ উপজেলা শাখার আইনবিষয়ক সম্পাদক অশোক কুমার রায় বলেন, ওই বৃদ্ধার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অমানবিক। ইউএনও থাকার ঘর করে দেওয়ায় ভালো লাগছে। এটি ইতিবাচক।