বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা বিনা মূল্যে যা দিচ্ছেন

হিউম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মীরা শাকসবজির বীজ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। ২০ মে মৌলভীবাজার সদরের কামালপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
হিউম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মীরা শাকসবজির বীজ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। ২০ মে মৌলভীবাজার সদরের কামালপুরে। ছবি: প্রথম আলো

মহামারির এই সময় সংকটে আছে মানুষ। এই সংকট মানুষকে কাজ থেকে দূরে সরিয়েছে, ঘরের ভেতর আটকে রেখেছে। সীমিত আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে। এমন বিপন্ন সময়ে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন একদল তরুণ। তাঁরা বাড়ি বাড়ি ছুটছেন। বিশেষ করে যাঁদের কিছু জমিজমা আছে। তাঁদের হাতে তুলে দিচ্ছেন নানা জাতের শাকসবজির বীজ, যাতে হাতের নগদ টাকা ফুরিয়ে গেলেও শাকসবজি বেচে কোনো রকমে চলতে পারেন। বিনা মূল্যেই এসব বীজ বিলাচ্ছেন তাঁরা।

এর উদ্যোক্তা মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের একদল তরুণ। ‘হিউম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি সংগঠন আছে তাঁদের। তিন বছর আগে গড়ে ওঠা সংগঠনের সদস্য এখন প্রায় অর্ধশত। স্বেচ্ছাসেবী এই তরুণেরা নানা সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়ান। কখনো শীতবস্ত্র বিতরণ করেন, কখনোবা বৃক্ষরোপণ। কখনো আবার সড়কের পাশে গজিয়ে ওঠা ঝোপঝাড়ও সাফ করে দেন। করোনাকালের এই সংকটেও বসে নেই তাঁরা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে শাকসবজির বীজ পৌঁছে দিচ্ছেন।

সংগঠনের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনেক মানুষের হাতেই এখন কাজকর্ম নেই। আয়ের পথও বন্ধ। সামান্য যা সঞ্চয় আছে, তাও অনেকেরই ফুরিয়ে গেছে। অনেকের ফুরিয়ে যাওয়ার পথে। ঘরে ধান-চাল কিছুটা থাকলেও শাকসবজি কিনতে নগদ টাকা লাগে। আয় না থাকলে, তা কেনার সামর্থ্যও থাকবে না অনেকের। এ ছাড়া বাইরে থেকে এলাকার হাটবাজারে যদি সবজি আসে, তার দামও পড়ে বেশি। অনেকের পক্ষে তা কেনা সম্ভব হয় না। কিন্তু এলাকার মানুষ যদি যার যার মতো শাকসবজি চাষ করে, তাতে নিজেদের চাহিদা পূরণ তো হবেই, আশপাশের বাজারে এগুলো বিক্রিও করতে পারবে। চাইলে পাড়া-প্রতিবেশীরা কম দামে সেই সবজি কিনেও নিতে পারবে।

>

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের একদল তরুণ এরই মধ্যে দেড় হাজার প্যাকেট সবজির বীজ বিতরণ করেছেন।

এই ভাবনা থেকেই গত ২৪ এপ্রিল তরুণেরা ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়লেন। সেই থেকে তাঁরা প্রতিটি বাড়ি বাড়ি ছুটছেন। সবাইকে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। যাঁরাই আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তাঁদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ৯ জাতের শাকসবজির বীজ। এর মধ্যে আছে ঝিঙে, চিচিঙ্গা, কুমড়া, লাউ, কলমিশাক, পাটশাক, ডাঁটা শাক, ধনেপাতা ও পুঁইশাক। প্রথম ধাপে তাঁরা ৫০০ পরিবারের মধ্যে দেড় হাজার প্যাকেট বীজ বিতরণ করেছেন। এখন করছেন আরও ৩ হাজার ৬০০ প্যাকেট। ইউনিয়নকে এই সংকটের কালে শাকসবজিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতেই তাঁদের এই উদ্যোগ।

হিউম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহসাধারণ সম্পাদক আল হাদী গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৯ ধরনের শাকসবজির বীজ কৃষকের হাতে তুলে দিচ্ছি। আমাদের ইউনিয়নের আব্দালপুরে বেশি শাকসবজি উৎপাদিত হয়। এই গ্রামেরই প্রায় ৫০ জন কৃষককে আমরা বীজ দিয়েছি। যাতে তাঁদের মাধ্যমে এলাকার হাটবাজারের চাহিদা পূরণ হতে পারে।’

সংগঠনের সভাপতি আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমরা দ্বারে দ্বারে গিয়ে সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করছি। সবাই চাষ করলে ইউনিয়নে সবজির যে চাহিদা আছে, যে ঘাটতি আছে, তা পূরণ হবে। আমরা বিভিন্ন জাতের বীজ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি।’ এলাকার প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদের আর্থিক সহায়তায় তাঁদের কার্যক্রম চলে বলে জানালেন আব্দুস সামাদ।

কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়সল আহমদ জানালেন, সংগঠনটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইউনিয়নের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সৃজনশীল কাজ করে আসছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও শাকসবজির সংকট মোকাবিলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা বীজ বিতরণ করছে।