ঝিনাইদহে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে প্রভাবশালী ব্যক্তির গোয়ালঘর নির্মাণ

কালভার্টের মুখ বন্ধ করে গোয়াল ঘর নির্মাণ করায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১১টি পরিবার। ছবি: প্রথম আলো
কালভার্টের মুখ বন্ধ করে গোয়াল ঘর নির্মাণ করায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১১টি পরিবার। ছবি: প্রথম আলো

টুটুল খানের বাড়ির উঠানে পানি, ঘরের মধ্যেও পানি। তাঁদের পাড়ার ১১ বাড়িতে ঘুর্ণিঝড় আম্পানের দিন পানি উঠে যায়। পরিস্থিতি খারাপ দেখে তাঁরা বাড়িঘর ফেলে আশ্রয় নেন অন্যের বাড়ি। গত ১০ দিনে অন্যরা বাড়ি ফিরলেও টুটুল খানসহ দুটি পারিবার এখনো ফিরতে পারেনি। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ড গ্রামের খান পাড়ায়।


পাড়ার বাসিন্দাদের দাবি, এই পাড়ার পানি বের হওয়ায় জন্য গ্রামের রাস্তায় একটি কালভার্ট রয়েছে। কিন্তু গ্রামের প্রভাবশালী হাসান আলী নামের এক ব্যক্তি সেই কালভার্টের মুখ বন্ধ করে সেখানে গোয়ালঘর নির্মাণ করেছেন। এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি আটকে পাড়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ওই কালভার্টের মুখ খুলে দিতে গেলে তাঁদের বাঁধা দেওয়া হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার সঙ্গে তাঁরা বসবাস করছেন।


সরেজমিনে সেখানে গিয়ে কথা হয় টুটুল খানের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁদের এই পাড়ায় ১১টি পরিবার বসবাস করে। কেউ ২০ বছর, কেউ ৫ বছর ধরে এখানে বাড়ি করেছেন। এর আগে গ্রামের আরেক পাড়ায় তাঁদের বসবাস ছিল।


টুটুল খান বলেন, গ্রামের এক প্রান্ত দিয়ে তাঁদের পাড়ার পূর্বপাশ থেকে একটি ইট বিছানো রাস্তা চলে গেছে। রাস্তাটি গ্রাম থেকে বের হয়ে কোটচাঁদপুর-সাব্দালপুর সড়কে মিশেছে। এই রাস্তায় একটি ছোট কালভার্ট রয়েছে। যে কালভার্টের কারণে বৃষ্টি হলেও তাঁদের পাড়ায় কোনো পানি জমত না। তাঁদের গ্রামসহ পাশের বেশ কিছু এলাকার পানি ওই কালভার্ট দিয়ে বের হয়ে মাঠ পেরিয়ে বড় বিল পার হয়ে বলুহর বাঁওড়ে নেমে যেত।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের দিন থেকে পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের দিন থেকে পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

কিন্তু তিন বছর ধরে এই কালভার্টের মুখ বন্ধ করে সেখানে হাসান আলী নামের এক ব্যক্তি তাঁর গরু রাখার জন্য গোয়ালঘর তৈরি করেছেন। যে কারণে কালভার্ট দিয়ে পানি নামতে না পেরে জমতে শুরু করেছে। প্রথম দুই বছরে পানি একটু কম হওয়ায় তেমন অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এ বছর ঘুর্ণিঝড় আম্পানের সময় বৃষ্টিতে তাঁদের পাড়ায় হাঁটুপানি জমে যায়। ঘরগুলোর মধ্যেও পানি উঠে পড়ে।


টুটুল খান আরও জানান, যে স্থানে গোয়ালঘরটি তৈরি করা হয়েছে, সেটি সরকারি জায়গা। কালভার্টের মুখে সরকারি জায়গা দখল করে পানির গতিপথ বন্ধ করা হয়েছে।


টুটুল খান জানান, ঝড়ের পরদিন তাঁরা নিজেরা বাঁচার জন্য কালভার্টের মুখ খুলে দিতে কোদাল নিয়ে যান। কিন্তু তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। কোনো ভাবেই তাঁরা পাড়ায় জমে থাকা পানি বের করতে না পেরে বাধ্য হন বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে।


ওই পাড়ার ১১ টি পরিবারের বাড়িঘরে পানি উঠে গিয়েছিল। পরে রোদের তাপে পানি শুকিয়ে ঘরের বারান্দা জে¦গে উঠলে কয়েকটি পরিবার বাড়ি ফিরেছে। এখনো স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাশের নাজমুল হোসেনের বাড়িতে অবস্থান করছেন টুটুল খান।


ওই পাড়ার বৃদ্ধা রাজেদা বেগমও অন্যের বাড়িতে থাকছেন। বিধবা এই নারী তাঁর এক নাতিকে নিয়ে সেখানে বসবাস করেন। রাজেদা বেগম জানান, ঘর থাকতেও পরের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। সামান্য কালভার্টের মুখটি খুলে দিলে পানি মাঠ দিয়ে চলে যেত। কিন্তু ওই ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় এই কাজটি কেউ করতে সাহস পাচ্ছেন না।


যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই হাসান আলীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি জমি কিনে বাড়ি করেছেন। তাঁর প্রয়োজনেই মাটি ভরাট করে সেখানে গোয়ালঘর করেছেন। তিনি তাঁর বাড়ির মধ্য দিয়ে পানি যেতে দেবেন না।

হাসান আলীর দাবি, কালভার্টের মুখ খুলে দিলেও পানি বের হবে না। কারণ ওই পাড়ার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ির চেয়েও কালভার্ট উঁচু। যে কারণে তিনি কালভার্টের মুখ কেটে খামখা জায়গা নষ্ট করতে দেননি।


এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তিনি স্থানীয় সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। জায়গাটি সরকারি হলে কালভার্টের মুখের বাঁধটি ভেঙে দেওয়া হবে।