বেআইনি হিসাবও বিল বাড়িয়েছে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিছু গ্রাহকের কাছে এবার বহুগুণ বেশি বিদ্যুতের বিল যাওয়ার একটি কারণ—বিতরণ সংস্থাগুলোর বেআইনি হিসাব। বাড়তি বিলের সুরাহা হয়নি, তবে পরিশোধের জন্য চাপ আসছে। এদিকে সরবরাহ ব্যবস্থা নাজুক, ঝড়–বৃষ্টি হলে খোদ রাজধানীতে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তি হচ্ছে।

মে মাসে দেশজুড়ে আবাসিক গ্রাহকদের একাংশ অস্বাভাবিক বেশি বিল পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। কোভিড পরিস্থিতির কারণে এবার বকেয়াসহ দু-তিন মাসের বিল একসঙ্গে এসেছে। বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো কোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে ধাপ না দেখে মোট বিদ্যুৎ খরচের ওপর ইউনিটের দাম ধরেছে। আন্দাজে হিসাব তো আছেই।

এভাবে ১০ থেকে ১২ এমনকি ১৬ গুণ বাড়তি টাকাও বিল করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) মাইকে ঘোষণা দিচ্ছে, এ মাসের মধ্যে টাকা না দিলে লাইন কেটে দেবে। সংস্থাগুলো অবশ্য গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, বাড়তি বিল পরবর্তী সময়ে সমন্বয় করবে।

বিতরণ সংস্থাগুলো বাড়তি বিলের বোঝা চাপিয়েছে, অথচ এই ঝোড়ো মৌসুমে বিদ্যুৎ–সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে পারছে না। গত ১০ বছরে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ ব্যবস্থা রয়ে গেছে মান্ধাতার আমলে।

গত বুধবার ভোরে রাজধানীতে ঝড়ের তাণ্ডবের পর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ দফায় দফায় যাওয়া-আসা করেছে। ঝড়ে গণভবনসহ অনেকগুলো জায়গায় গাছ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছিল।

দক্ষিণ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ দেয় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন) এ টি এম হারুন-অর-রশিদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সরবরাহ লাইন বহু পুরোনো। এই বিতরণ ব্যবস্থা দিয়ে এর চেয়ে ভালো সেবা দেওয়া যায় না।’

বেআইনি বিলের হয়রানি

এবার আরইবির ৮০টি সমিতি, ডিপিডিসি, ডেসকোসহ দেশের ছয়টি বিতরণ কোম্পানিরই গ্রাহকদের একাংশ গড়ে ১০ থেকে ১২ গুণ বেশি বিদ্যুৎ বিল পেয়েছেন। এই প্রতিবেদক বিভিন্ন অঞ্চলের মোট ১৪ জন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন এবং ৯ জনের বিলের কপি হাতে পেয়েছেন।

>

দু-তিন মাসের মোট বিদ্যুৎ খরচের ওপর দর ধরাতেও বিল বেড়েছে
সুরাহা হয়নি। টাকা দিয়ে দিলে সমন্বয় কঠিন।

তাঁদের মধ্যে ঢাকার দুজন গ্রাহকের কাছে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি বিল এসেছে। বিদ্যুতের মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বলেছিল, কোভিডের কারণে সবার বাড়ি গিয়ে মিটার দেখা যায়নি।

তবে বিল খতিয়ে দেখা যায়, বাড়তি হওয়ার আরেক বড় কারণ, বিইআরসির বেঁধে দেওয়া নিয়ম লঙ্ঘন করে দর ধরা। এমনটা করা বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিইআরসির সদস্য রহমান মোরশেদ অবশ্য মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বললেন, বিতরণ সংস্থাগুলোর বেশি বিল করার কথা তিনি শোনেননি।

বিইআরসির নিয়ম অনুযায়ী মোট সাতটি ধাপে বিদ্যুতের দাম ধরতে হয়। যে গ্রাহক মাসে যত কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, তাঁর বিলও তত কম হবে। মাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউনিটের দর হবে ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। ব্যবহার ৬০০ ইউনিট ছাড়ালে প্রতি ইউনিটে দাম গুনতে হবে ১১ টাকা ৪৬ পয়সা।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এবার অনেক গ্রাহকের কাছে এক থেকে দুই মাসের বকেয়াসহ এপ্রিলের বিল গেছে। প্রথম আলোর কাছে থাকা ছয়টি বিলের নমুনা বলছে, বিতরণ সংস্থাগুলো সব মাসের ইউনিট খরচ একসঙ্গে যোগ করে সেটার ওপর দামের হার ধরেছে। ফলে ওই গ্রাহকেরা ধাপের সুবিধা পাননি।

ধরা যাক, কোনো গ্রাহক মাসে সর্বোচ্চ ২৫০ থেকে ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। তিনি বিল দেবেন প্রতি ইউনিট ৬ টাকা দরে। তিন মাসে তিনি মোট খরচ করলেন ৯০০ ইউনিট। দরটা এই মোটের ওপর ধরলে তাঁকে ইউনিটে প্রায় সাড়ে ১১ টাকা গুনতে হবে। অর্থাৎ বিল হয়ে যাবে দ্বিগুণ।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, একবার বিল দিয়ে দিলে বাড়তি টাকার সমন্বয় হওয়া সহজ নয়। ক্যাব এসব বিল বাতিলের দাবি জানিয়ে বিইআরসিকে চিঠি দিয়েছে; সংস্থাটি কোনো ব্যবস্থা না নিলে মামলা করবে।