করোনা সংক্রমণে বগুড়ার 'চাষি বাজার' স্থানান্তর, ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বগুড়া শহরে মাছের পাইকারি আড়ত 'চাষি বাজার' স্থানান্তর করা হয়েছে। কোন প্রকার ঘোষণা ছাড়াই বাজারটি কয়েক কিলোমিটার দূরে শহরের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট।

চাষি বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারেরা অভিযোগ করেছেন, নীতিমালা লংঘন করে ইজারাদার ও একজন আড়ৎদারকে আর্থিক সুবিধা দিতে প্রশাসন এমন করেছে। বিষয়টি নিয়ে আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করা হয়নি। ফলে চাষি বাজারের বেশির ভাগ আড়ৎদার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

চাষি বাজারের আড়ৎদার দীপক কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ত চাষি বাজারে ১৭টি মাছের আড়ত আছে। এসব আড়তে প্রতিদিন হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও কর্মচারির আনাগোনা। ২১ মে প্রথম তাঁর মালিকানাধীন সতীশ মৎস্য আড়তের একজন কর্মচারীর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে তাঁর আড়ত এবং পাশের ফেলুরাম মৎস্য আড়তের চারজনসহ মোট ৩১ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণ ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সবগুলো আড়তের মালিক-কর্মচারির নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঈদের একদিন আগে বাজারের কেনাবেচা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

এই আড়ৎদার বলেন, সবার করোনা পরীক্ষার পর প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে পাশ্ববর্তী কোনো জায়গায় মাছের আড়ত সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্ত এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি আড়তের মালিক-কর্মচারির নমুনা পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই চাষি বাজার স্থানান্তর করা হলো।

চাষি বাজারের কয়েকজন আড়ৎদার বলেন, চাষি বাজারে প্রতিদিন ভোরে কয়েক হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় হয়। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে মাছ বিক্রি করতে আসেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পরও এখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে বেচা–কেনা সম্ভব হচ্ছিল না। এ কারণে বাজার বন্ধ রাখার অনুমতি চেয়ে আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু প্রশাসন বাজার বন্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বলে তাদের অভিযোগ। এই আড়ৎদারদের অভিযোগ, খোলা জায়গায় বাজারটি সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও প্রশাসন ও পুলিশ উদ্যোগ নেয়নি। এখন বাজারের আড়তে আড়তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এখানকার কারও সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করে বাজারটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

চাষিবাজার মৎস্য আড়ৎদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় 'চাষি বাজার' প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। মাছ–সবজিসহ উৎপাদক পর্যায়ে চাষিরা সরাসরি যাতে ন্যায্যমূল্যে ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারেন, এ জন্য এই বাজারের যাত্রা। শহরের চেলোপাড়ায় করতোয়া নদীর তীরে রেলওয়ের জায়গায় এই বাজার। শুরুতে শাক-সবজি বিক্রি করা হলেও ধীরে ধীরে এটি মাছের পাইকারি বাজারে পরিণত হয়। প্রতিদিন গড়ে ৫০ ট্রাক মাছ কেনা-বেচা হয় এখানে। চাষি বাজার ইজারা দিয়ে পৌরসভা বিপুল রাজস্ব আয় করছে। অথচ করোনার সাময়িক সমস্যার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে বাজারটি অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।

জানতে চাইলে চাষি বাজারের ইজারাদারের অন্যতম অংশীদার এবং বগুড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ লাখ টাকায় চাষি বাজার ইজারা নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসে সংক্রমণে চাষি বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় বন্ধ আছে। এতে সমস্যা ছিল না। কিন্তু স্থানীয় বাজারে মাছের সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। ফলে মাছের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাজারটি সরানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রথম দিনেই এই বাজরে ৪০ ট্রাক মাছের আমদানি হয়েছে। চাষি বাজার চালু না হওয়া পর্যন্ত চারমাথা এলাকার অস্থায়ী মাছের বাজার বসবে।

জানতে চাইলে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, শহরের সব বাজার পৌরসভার অধীনস্থ। বাজার বসানো কিংবা সরানোর ব্যাপারে তাঁর কিছু জানা নেই।

বগুড়া পৌরসভার মেয়র একেএম মাহবুবর রহমান বলেন, চাষি বাজার সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এ ব্যাপারে কেউ তাঁকে কিছু জানাননি।