লিবিয়া থেকে সুজনের শেষ আকুতি, 'আব্বু, আমাকে বাঁচাও'

লিবিয়ায় নিহত সুজন মৃধা (২০)
লিবিয়ায় নিহত সুজন মৃধা (২০)

'এ মাসের ১৬ তারিখ ছেলে একটা অডিও রেকর্ডিং পাঠায়। সেখানে বলেছিল—আব্বু, আমাকে বাঁচাও। আমাকে মেরে ফেলবে। এরপর মুঠোফোনে দালালেরা ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আমার বাজানকে বাঁচাতে আমি টাকা দিতে রাজি হই। কিন্তু তার আগেই আমার বাজানকে মেরে ফেলল, আমার বুকটা খালি করে দিলো। আমার বাজান আমাকে কামাই করে খাওয়াতে চাইছিলো। বাজানের কামাই আমরা খাতি পারলাম না।'

এই আক্ষেপ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা কাবুল মৃধার। তাঁর ছেলে সুজন মৃধা (২০) খুন হয়েছেন লিবিয়ায়। এই খবর পাওয়ার পর থকে বামনডাঙ্গা গ্রামে সুজনদের বাড়িতে এখন চলছে মাতম।

সুজনের ছোট ভাই সুমন মৃধা (১৬) প্রথম আলোকে বলে, মা-বাবা ও চার ভাই–বোনের সংসারের হাল ধরতে দেশ ছেড়েছিলেন পরিবারের বড় ছেলে সুজন। বিদেশে গিয়ে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। সেখানে ভালো থাকবেন, ভালো কাজ করতে পারবেন। এমন সব আশায় চার লাখ টাকার বিনিময়ে দালাল তাঁকে চার মাস আগে লিবিয়ায় পাঠায়। তিনি বলেন, ভাই জানিয়েছিলেন দালালেরা তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। তাঁকে আটকে রেখে ১৬ মে মুঠোফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন দালালেরা।

নিহত সুজনের বাবা কাবুল মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, 'আমি তাদের (দালাল) বলেছিলাম, আমার তিন কাঠা জমি আছে। সেটা বিক্রি করে টাকা দেব। তারা আমাকে ব্যাংক একাউন্ট দিয়েছে। আমি বলেছিলাম আমার বাজানের কোনো ক্ষতি করো না। জুন মাসের ১-২ তারিখে টাকা দেব। কিন্তু তার আগেই টিভি, ইন্টারনেটে জানতি পারলাম আমার বাজানরে গুলি করে মাইরা ফ্যালাইছে।'

কাবুল মৃধা বলেন, পাশের গ্রামের রব মোড়লের মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরে রব মোড়ল মাদারীপুরের রাজৈর থানার শ্রীরামপুর গ্রামের জুলহাসের মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়াতে পাঠান।

গৃহযুদ্ধ–কবলিত দেশ লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে গত বৃহস্পতিবার ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসীকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আহত হন ১১ জন। আহতদের মধ্য একজনের বাড়ি মকসুদপুর উপজেলার সুন্দরদি গ্রামে। তাঁর নাম ওমর শেখ (২২)।

ওমর শেখের বাবা কাঠমিস্ত্রি কালাম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, একটু স্বচ্ছলতার জন্য ছেলেকে চার লাখ টাকা দিয়ে একই গ্রামের দালাল লিয়াকত মোল্লার মাধ্যমে লিবিয়ায় পাঠান। তাঁর ছেলে ওমর শেখ এখন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লিবিয়ার ত্রিপলির হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছে।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তসলিমা আলি বলেন, বিষয়টি জানার পর তাঁরা নিহতের বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দালাল চক্রকে ধরতে চেষ্টা চলছে।