সবই ঠিক আছে, তারপরও আতঙ্ক

কাল থেকে ঢাকার রাস্তায় চলবে গণপরিবহন। ফাইল ছবি
কাল থেকে ঢাকার রাস্তায় চলবে গণপরিবহন। ফাইল ছবি

বেসরকারি একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেখ শাকিল আহমদ। অফিস তাঁর বনানী এলাকায়। বাসা শ্যামলীতে। ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আজ রোববার সকাল সোয়া আটটার দিকে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। দুটি সিগন্যাল পেরিয়ে বনানীর অফিসে পৌঁছান সকাল ৯টার কিছু আগে। টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর আজ শাকিল অফিসে এসেছেন। প্রথম দিকে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগে গেল। তারপর যথারীতি কাজের গতির মধ্যে নিজে আটকে গেলেন।

কেমন লাগছে অফিস করতে? জানতে চাইলে শাকিল আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাই, সবই ঠিক আছে। নির্দেশ অনুযায়ী সকালে অফিসে চলে এসেছি। জ্যামে আটকাতে হয়েছে জাহাঙ্গীর গেটের সামনে, এরপর বনানী ১১ নম্বর সড়কের সামনে। মাত্র আধা ঘণ্টা সময় লেগেছে আমার অফিসে আসতে। অফিসে উপস্থিতি শতভাগ। এত কিছুর পরও কেন জানি একটা আতঙ্ক মনের ভেতর কাজ করছে।’

কী ধরনের আতঙ্ক? উত্তরে শাকিল আহমদ বলেন, ‘কিছু ধরতে গেলে কী যেন হয়! কোথায় ভাইরাস লুকিয়ে আছে! যতটা সাবধানে থাকা যায়, সেই পথেই চলছে। বাসা থেকে শুকনা খাবার নিয়ে এসেছি। সঙ্গে খাবার পানি। ডাইনিংয়ে গিয়ে খাচ্ছি না। ক্যাপ, গ্লাভস, চশমা পরে কাজ করছি। এই তো এভাবে চলছে। কত দিন সাবধানতায় কাজ করতে হবে কে জানে।’

দীর্ঘদিন পরে যাঁরা অফিসে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক রয়ে গেছে। যাতায়াতের ক্ষেত্রে পরিবহন নিয়ে কিছুটা সমস্যা হলেও সড়কে যানজট না থাকায় কর্মস্থলে যেতে পারছেন কম সময়ে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি নিজে মানলেও সবাই মানছেন না। তা ছাড়া নিজে যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তা যথেষ্ট কি না, সেটাও বুঝতে পারছেন না।

শাকিল ব্যক্তিগত গাড়িতে করে এলেও আজ অফিস-আদালত খুলে যাওয়ায় অনেকেই রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে অফিস করতে হয়েছে। কারণ, গণপরিবহনের চাকা আজ ঘোরেনি। কাল সোমবার থেকে এটি চালু হবে।

গুলশানে চাকরি করেন রিপন চন্দ্র বণিক। বাড়ি তাঁর মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে। আড়াই মাস আগের মতো আজ সকালে অফিসে এসেছেন তিনি। তবে বাসা থেকে রিকশায় চড়ে কচুক্ষেত এলাকায় এসেছেন ৭০ টাকা ভাড়া দিয়ে। এরপর সেখান থেকে হেঁটে অফিস পর্যন্ত।

অফিসগামী লোকজন আজ কিছুটা নির্বিঘ্নে এলেও পরিস্থিতি কাল থেকে পাল্টে যেতে পারে। এমনই ধারণা অনেকের ভেতর। আর চিরচেনা যানজটে পড়লে অবস্থা কী হবে, তাঁরা সে ভাবনাতেই ডুবে আছেন।

এদিকে আজ থেকে অফিস-আদালত দোকানপাট খুললেও, সাধারণ ছুটি আগের মতো ঢাকার রূপ ছিল না। এর প্রধান কারণ গণপরিবহন বন্ধ। ৫০ শতাংশ কম যাত্রী নিয়ে খেলার কথা থাকলেও, সত্যিই সেটি বাস্তব রূপ নেবে কি না, সংশয় রয়েছে অনেকের ভেতর। আর সময়মতো নির্ধারিত স্টপেজ থেকে বাস পাওয়া যাবে কি না, দুশ্চিন্তাও রয়েছে।

সাভার বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন মহাখালী এলাকায় অফিস করতে হয় সরকারি এক কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসকে। অফিস খোলার নির্দেশ পেয়ে তিনিও সকাল সাতটার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছে। জান্নাতুল ফেরদৌস রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে অফিসে এসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে তো এলাম। বাস কম ছিল, রাস্তা কিছুটা ফাঁকা। টাকা বেশি খরচ হলেও সমস্যা হয়নি। কাল কী হবে কে জানে।’