খুলনা থেকে ট্রেন ছেড়েছে, বাস নামবে কাল

খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো গাড়ি ছাড়েনি। আগামীকাল সোমবারের জন্য কিছু গাড়ি পরিষ্কার করা হচ্ছে। আজ রোববার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো
খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো গাড়ি ছাড়েনি। আগামীকাল সোমবারের জন্য কিছু গাড়ি পরিষ্কার করা হচ্ছে। আজ রোববার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

খুলনা থেকে ট্রেন ছেড়ে গেলেও দূরপাল্লার ও আন্তজেলা পর্যায়ে কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। তবে আগামীকাল সোমবার সীমিত পরিসরে বাস চলাচল শুরুর জন্য পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। পরিবহনের টিকিট কাউন্টার খোলা থাকলেও ভিড় চোখে পড়েনি।

আজ রোববার সকাল নয়টায় খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৩৪০ জন যাত্রী নিয়ে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশে চিত্রা এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটি ছেড়ে যায়। কোনো টিকিট স্টেশন থেকে বিক্রি হয়নি। অনলাইনে টিকিট কিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেনে ওঠেন যাত্রীরা। ভাড়াও আগের মতো। কোনো টাকা বাড়ানো হয়নি।

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল সোনাডাঙ্গায় গিয়ে দেখা যায়, লাইন দিয়ে বিভিন্ন পরিবহনের বাস দাঁড় করানো। পরিবহনশ্রমিকেরা সেখানে হাজির। তাঁরা অনেকে এক জায়গায় হয়ে গল্প করছেন; কেউ এখনো ধোয়ামোছার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক বাসমালিকেরও দেখা মিলল।

খুলনা-সাতক্ষীরা রুটের চালকের এক সহকারী আবদুস সালামকে সদ্য কিনে আনা স্প্রে বোতল, হ্যান্ডওয়াশ, সাবান, ছোট স্যানিটাইজারের বোতল ও এয়ারফ্রেশনার গুছিয়ে রাখতে দেখা গেল। তিনি বলেন, ‘কাল থেকে বাস চলবে শুনছি। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। একটু তো সাবধানে থাকতে হবে। তাই যাত্রীদের জন্য এবং নিজেদের জন্য এগুলো কেনা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত গাড়ি চলবে কি না, জানি না। তবে চললে পেটটা চলত।’

গাড়ি চলা নিয়ে সংশয়ের কারণ জানতে চাইলে শেখ সেলিম নামের এক চালক বলেন, গাড়ি চলবে শোনার জন্য অপেক্ষায় আছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। তবে এখনো সমিতির কোনো কর্মকর্তা তাঁদের এখানে আসেননি। টিভিতে দেখেছেন যাত্রী ‘এক ইস্টু এক’ করতে হবে। কিন্তু এখনো এখান থেকে নির্দেশনা পাননি কীভাবে চলবে। কী কী করতে হবে। তা ছাড়া চাঁদা না কমালে চলবে কীভাবে!

চাঁদার বিষয় নিয়ে পাশে থাকা একজন মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খুলনা থেকে সাতক্ষীরা দিয়ে এক বাসে সর্বোচ্চ দুইটা ট্রিপ দেওয়া যায়। সব মিলে লাভ থাকে হাজার টাকার মতো। গাড়ি বের করলেই জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত নেওয়ার জন্য সাড়ে ৭০০ টাকা, এরপর ডুমুরিয়ায় ২০ টাকা, চুকনগর ৮০ টাকা, আঠোরমাইল ১০ টাকা আর পাটকেলঘাটায় ২০ টাকা দিতে হয়। একবার যাওয়া-আসায় ১ হাজার ৭৫০ টাকা সমিতিকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে গাড়ি পরদিন বন্ধ। অথচ সমিতি এই দুই মাসে মালিক বা শ্রমিক কারও কোনো খোঁজ নেয়নি। করোনার এই সময়ে চাঁদা একই রকম থাকলে গাড়ি চালানো সম্ভব হবে না।

ওই বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, কিছু কিছু কাউন্টার খোলা, কিছু বন্ধ। কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার টিকিটে আগের চেয়ে ৮০ শতাংশ ভাড়া বেশি রাখা হলেও চট্টগ্রামের টিকিটে আগের চেয়ে ঠিক দ্বিগুণ ভাড়া রাখা হচ্ছে। কাউন্টার থেকে গাড়ির ট্রিপ কমানো হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে ট্রিপ বাড়ানোর চিন্তা করছেন মালিকেরা। তবে ভাড়া বেশি হওয়ায় যাত্রী কমবে আর গাড়িও বন্ধ হবে বলে মনে করছেন বেশির ভাগ কাউন্টারের লোকজন।

খুলনা থেকে করোনার আগে প্রতিদিন ফাল্গুনী পরিবহনের ২৬টি ট্রিপ ঢাকায় যেত। এখন ট্রিপ করা হয়েছে মাত্র দুটি। ফাল্গুনী পরিবহনের সোনাডাঙ্গা কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. আনিসুর রহমান বলেন, সোমবার দুটি গাড়ি যাবে। টিকিট বিক্রি প্রায় শেষের পথে। এসি ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং নন-এসি সিট ৯০০ টাকা রাখা হচ্ছে। আগে এসি ছিল ৮০০ টাকা আর নন-এসি ছিল ৫০০ টাকা। তিনি বলেন, ‘গাড়ি কত দিন চলবে, তা বলা যাচ্ছে না। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ এত টাকা ভাড়া দিয়ে যাবে না। আবার ঢাকা থেকে ফেরার পথে লোক পাওয়া যাবে না। সব মিলিয়ে পরিবহনে লোক পাওয়া কঠিন হবে। গাড়ি চালিয়ে রাখাও কঠিন হবে। চাহিদা বুঝে আমরা গাড়ির ট্রিপ বাড়াব।’

ওই টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রোহান, জিএস ও কমফোর্ট নামের তিনটি পরিবহন ছেড়ে যায়। সব নন-এসি। আগে ভাড়া ছিল ৬০০ ও ৭০০ টাকা। এখন করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ ও ১ হাজার ৪০০ টাকা। সেখানকার কাউন্টার মাস্টার মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, দুই সিটে একজন বসানো লাগবে। তাই ভাড়াও দুই সিটের নেওয়া হচ্ছে।

নগরের সাতরাস্তা মোড়ের টিকিট কাউন্টারগুলো খোলা অবস্থায় দেখা যায়। ওই সব কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে, আবার কেউ কেউ কাল থেকেই বেচবেন বলে জানান। সাতরাস্তা মোড়ের এসএ ও বিআরটিসি কাউন্টারের মালিক বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘ঢাকার টিকিট এখনই বেচছি না। তবে চিটাগংয়ের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ভাড়া ডাবল।’

খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার বুলবুল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, চিত্রা এক্সপ্রেসটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৩৪০ জন যাত্রী নিয়ে সকাল নয়টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। ট্রেনটির ধারণক্ষমতা ৮৪২ যাত্রী। হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন, নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে যাত্রীদের প্রথমবারের মতো ট্রেনে উঠতে হয়েছে। যাত্রার আগে ওয়াশপিটে পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ট্রেনের ভেতর ও বাইরে জীবাণুমুক্ত করা হয়।

বুলবুল আহমেদ জানান, রেলওয়ের মেডিকেল টিম, নিরাপত্তা বাহিনী (জিআরপি), রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ের টিকিট কালেক্টররা সমন্বিতভাবে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করছেন। সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় চিত্রা এক্সপ্রেস বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন এখনো হাতে আসেনি। তবে খুলনা-চিলাহাটি রুটে রূপসা এক্সপ্রেস ও খুলনা-রাজশাহী রুটে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি ৩ জুন থেকে চলবে।’