সুজন জিপিএ ৪.১১ পেলেও মা-বাবার ঝরছে অশ্রু

মো. সুজন মিয়া ওরফে হৃদয়
মো. সুজন মিয়া ওরফে হৃদয়

ঈদের দিন বিকেলে নদীর পাড়ে বেড়াতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে মারা যাওয়া কিশোর মো. সুজন মিয়া ওরফে হৃদয় আজ রোববার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। জিপিএ ৪.১১ পেয়েছে সে।

সুজন বরগুনা শহরের চরকলোনি এলাকার চাঁদশী সড়কের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। বরগুনা সরকারি টেক্সটাইল ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে সে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

ঈদের দিন বিকেলে নদীর পাড়ে বেড়াতে গেলে সুজনকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ফেলে রেখে যায় কয়েক কিশোর। পরদিন সকালে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে মারা যায়। সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের গোলবুনিয়া এলাকায় পায়রা নদীর পাড়ে এ ঘটনা ঘটে। সুজনের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৪-১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।

মামলার ১ নম্বর আসামি নোমান কাজীসহ (১৯) সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার অপর আসামিরা হলেন হেলাল মৃধা (২৬), রানা আকন (১৭), ইমন (১৮), সাগর গাজী (১৬), হেলাল ফকির (২১) ও শফিকুল ফরাজী (১৭)।

ছেলের পরীক্ষার ফল জানতে পেরে সুজনের মা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর ইচ্ছা ছিল। আমাদের মতো যাতে কষ্ট করতে না হয়, সে জন্য ওকে শিক্ষিত বানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার সব শেষ করে দিল ওরা।’

সুজনের ফল শুনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই দিয়ে কী হবে? আমার ছেলে তো আমার কাছে ফিরে আসবে না।’

সুজনদের প্রতিবেশী জালাল আহমেদ বলেন, একে তো দরিদ্র পরিবার, তার মধ্যে একটি সন্তানকে জন্মদান থেকে শুরু করে ১৫-১৬ বছর পর্যন্ত লালন-পালন এবং লেখাপড়া করানোর পেছনে যে সময়, শ্রম, অর্থ এবং আদর স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়েছেন, মুহূর্তেই তা ধুলোয় মিশে গেছে কিছু বিপথগামী ছেলেপেলের কারণে।

টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন বলেন, সুজন ছাত্র হিসেবে খুব ভালো ছিল না, আবার খুব খারাপও ছিল না। তাঁদের প্রত্যাশা ছিল, সুজন পরীক্ষায় জিপিএ-৪ পেতে পারে। তাঁদের ধারণাই সঠিক হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভালো ফল করার পরও সুজনের জন্য আজ আমাদের অশ্রু ঝরছে। একজন শিক্ষক হিসেবে এ খারাপ লাগাটা বলে বোঝাতে পারব না।’ সুজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, সুজন হত্যাকাণ্ডের সাত আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকি আসামিদেরও ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।