বাগমারায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত তরুণের বাড়ির সামনে পুলিশের পাহারা

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া এক তরুণ ও পরিবারের সদস্যরা অবাধে চলাচল করছেন অভিযোগ ওঠায় বাড়ির সামনে গ্রাম পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে।

গতকাল রোববার রাতে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদ।

অভিযোগ উঠেছে, ওই তরুণের (২৫) কোভিড–১৯ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য স্থানীয় পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি প্রশাসন। ফলে ওই তরুণের বাবা ঘরের বাইরে এসে অবাধে চলাফেরা করছিলেন। মাঠে ধান কাটতেও গিয়েছিলেন। অন্য সদস্যরাও বাড়ির বাইরে আসছিলেন। তরুণও সুযোগ পেলে মোড়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। তবে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসায় তরুণসহ পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। লকডাউন করা হয়েছে বাড়িটি। তাঁরা যাতে বাড়ির বাইরে যেতে না পারেন, সে জন্য গ্রাম পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে বাড়িতে।
তবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ওই তরুণের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে না জানানোর কারণে পরিবারের সদস্যরা বিধিনিষেধ মানছিলেন না।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ওই তরুণ পোশাককর্মী। ঢাকায় একটি কারখানায় কাজ করেন। ঈদের আগের দিন ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৭ মে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহীর ল্যাবে পাঠানো হয়। গত শুক্রবার রাতে ওই তরুণের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পজিটিভ আসে। রাজশাহীর সিভিল সার্জন এনামুল হক ওই দিন রাজশাহীর চারঘাট, মোহনপুর ও বাগমারাতে একজন করে মোট তিনজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান। আক্রান্ত ব্যক্তিদের নাম পরিচয় গোপন রাখা হয়।
®তবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগকে আক্রান্ত প্রত্যেকের নাম–পরিচয় মৌখিকভাবে জানানো হয় ওই দিন রাতেই। বাগমারার তরুণের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য বিভাগ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করে। নির্দেশনা পেয়ে চেয়ারম্যান পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে অবস্থানের অনুরোধ করেন। এতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তাঁরাও পরিবারের প্রতি নজর রাখা শুরু করেন।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশ উপেক্ষা করে ওই তরুণের বাবা ঘরের বাইরে এসে অবাধে চলাচল শুরু করেন এবং খেতের ধান কাটতে মাঠে যান। তরুণও সুযোগ পেলে বাড়ির পাশে মোড়ে ঢুঁ মারেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসলে গতকাল রোববার বিকেলে ইউএনওর নেতৃত্বে থানা–পুলিশ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যান ওই তরুণের বাড়িতে যান। এ সময় পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক বাড়িতে অবস্থানের নির্দেশ দিয়ে বাড়িটি লকডাউন ঘোষণা করা হয়। পরিবারের সদস্যরা যাতে বাইরে আসতে না পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য একজন গ্রামপুলিশকে দিয়ে বাড়ির বাইরে পাহারা বসানো হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, কোভিড–১৯ আক্রান্ত পোশাক শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে অবস্থানের বিষয়টি মানতে চাচ্ছিলেন না। তাঁদের আনুষ্ঠানিকভাবে না জানানোর কারণে এই সমস্যার তৈরি হয়েছিল। তিনিও তরুণের প্রতিবেদন নিয়ে ধূম্রজালের ভেতরে আছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী জানান, ঢাকাফেরত ওই তরুণের প্রতিবেদন ২৯ মে আসার পরই ল্যাবে সমস্যা দেখা দেয়। এ জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। ওই পরিবারের অন্য সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা বাইরে চলাফেরার চেষ্টা করলে স্থানীয়ভাবে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরপর প্রশাসনের সহযোগিতায় বাড়িটি পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।