মালিকদের স্বার্থে বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বাস মালিকদের স্বার্থেই এটা করা হয়েছে। আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

আজ থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে বাস-মিনিবাস চলাচল শুরু হয়েছে। বাসে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনাসহ সরকার বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে। বাড়তি ভাড়া আজ থেকেই কার্যকর হয়েছে। এই ভাড়ার হার করোনাকালের জন্য প্রযোজ্য হবে।

বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা অমানবিকতা। কম আয়ের মানুষই বাসে ওঠে। কার স্বার্থে বাস ভাড়া বাড়িয়েছে? মালিকদের স্বার্থে। মালিকদের আবার অনুদান দিচ্ছে। পুরো বিষয়টা হয়েছে লুটপাটের জন্য।’

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শুরু থেকে সরকারের সব পদক্ষেপই ভুল ছিল উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বারবার করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এবং তাঁদের নিয়োজিত পরামর্শক কমিটিই বলেছে, আরও কিছুদিন নিয়ন্ত্রণে রাখতে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকও বলেছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ট্রেন, বাস, লঞ্চে মানুষ গাদাগাদি করে উঠছে। বাংলাদেশে গণপরিবহন এভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। আরও সময় নিতে পারত।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দায়িত্বশীলতা নেই বলেই সরকার তুঘলকি কারবার করছে। জনগণকে মহাবিপদের দিকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্বহীনতা, সমন্বয়হীনতা। মনেই হয় না যে সরকার আছে। একেক বিভাগ একেক রকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। সরকারের একলা চলো নীতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সিকদার গ্রুপের দুই ভাইয়ের দেশ ছাড়ার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার কোথায়? আজকে এই কারণেই দেশ ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে।

কৃষকদের ‘করুণ অবস্থা’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। ধান কাটার নামে আওয়ামী লীগ নেতারা কৃষকের পাকা ধান নষ্ট করেছেন। কোথাও কাঁচা ধান কেটেছেন। বিএনপি কৃষকের ধান কাটতে সহায়তা করেছে।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকারের দুর্নীতি ও অদূরদর্শিতার কারণে বাংলাদেশের কৃষি আজ ধ্বংসের মুখে। সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কম কিনে বেশি কিনছে চালকল মালিকদের থেকে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে। এখানেও দলীয় ব্যবসায়ী চালকল-মালিকদের মুনাফা করে দেয়।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বোরো ধানের উৎপাদন হবে প্রায় দুই কোটি মেট্রিক টন। আর সরকার সংগ্রহ করবে ধান ৮ লাখ ও চাল ১৪ লাখ টন, যা উৎপাদনের মাত্র ৯ শতাংশ। বিএনপি এই পরিমাণ ২০ শতাংশ করার দাবি জানায়।

কৃষির বিভিন্ন খাতে ক্ষতির প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আগামী এক বছরের জন্য পোলট্রি, ডেইরিসহ কৃষি-সংশ্লিষ্ট খাতের সব ঋণ মওকুফ করতে হবে। কৃষককে তাঁর উৎপাদিত পণ্যের বিপরীতে আর্থিক সহায়তা দেওয়াসহ আরও অনেক দাবি জানান তিনি।

কৃষকদের জন্য কৃষক দলের কর্মসূচি তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সব জেলায় তাঁরা কৃষকদের থেকে ধান-চাল কেনার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি দেবেন। যেসব কৃষক ধান বিক্রি করতে পারছেন না, তাঁদের ধান বিক্রি করতে সহায়তা করা হবে। করোনার মধ্যে ত্রাণসহায়তা অব্যাহত থাকবে।

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিভিন্ন পেশাজীবী মারা গেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি চিকিৎসক জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের কিট প্রমাণিত হয়ে গেছে যে সেটা কার্যকর। তিনি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করেন।