'লঞ্চে কোনোরকমে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলাম'

লঞ্চ চলাচলের দ্বিতীয় দিনে যাত্রীদের কেউই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। লঞ্চগুলোও বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। ছবি: আসাদুজ্জামান
লঞ্চ চলাচলের দ্বিতীয় দিনে যাত্রীদের কেউই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। লঞ্চগুলোও বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। ছবি: আসাদুজ্জামান

তখন দুপুর ১২টা। সাইরেন বাজিয়ে শরীয়তপুর থেকে মিরাজ-৬ নামের একটি লঞ্চ সদরঘাটে আসে। এরপর লঞ্চ থেকে একে একে যাত্রীরা নামতে শুরু করেন। কোনো যাত্রী তিন ফিট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখেননি। অনেকের মুখে মাস্ক নেই, হাতে নেই কোনো গ্লাভস। ছোট আকারের লঞ্চটিতে যাত্রীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়।

মিরাজ-৬ নামের লঞ্চে করে শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় আসা তরুণ মোহাম্মদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, 'লঞ্চের ভেতর কোনোরকম দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। গাদাগাদি করে মানুষ শরীয়তপুর থেকে লঞ্চে করে ঢাকার সদরঘাটে এসেছে। কেউই স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে চলাচল করেনি। লঞ্চে যতক্ষণ ছিলাম, ততক্ষণ ভয়ে ছিলাম। আমরা লঞ্চের যাত্রীরা যেভাবে চলাচল করছি, তাতে অনেকে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।’

মিরাজ-৬ নামের লঞ্চটি গতকাল রোববারও একইভাবে অধিক যাত্রী নিয়ে সদরঘাটে আসে। এ ব্যাপারে লঞ্চটির ব্যবস্থাপক মো. সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘাটে লঞ্চ ভেড়ালে যাত্রীরা কে কার আগে নামবেন, সেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়েন। যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। যাত্রীদের চাপ থাকায় অনেক সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না।

টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। গতকালের মতো আজ সোমবারও সদরঘাটে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না কেউ। মাস্ক ছাড়া লঞ্চঘাটে প্রবেশ নিষেধ থাকলেও অনেক যাত্রী তা মানছেন না। আবার লঞ্চে যাত্রী ঢোকানোর আগে সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করার জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ দরকার, তা নিচ্ছে না লঞ্চের মালিকপক্ষ।

সচেতন যাত্রীরা বলছেন, সেসব লঞ্চমালিক কিংবা যাত্রী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে শিথিলতা দেখাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কারণে লঞ্চমালিকেরা তাঁদের ইচ্ছেমতো যাত্রী তুলছেন। যাত্রীরাও শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখে লঞ্চে করে যাতায়াত করছেন। এতে করে করোনার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপপরিচালক কায়সারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবার আগে যাত্রীদের সচেতন থাকতে হবে। আমরা সদরঘাটে দিনরাত দেখছি, খুব কম যাত্রী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করছেন। মুখে মাস্ক না দিয়ে হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর সদরঘাটে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন।’

বিআইডব্লিউটিএ অফিসের সারেং রফিকুল ইসলাম জানান, গতকালের তুলনায় আজ লঞ্চের যাত্রীদের চাপ বেশি ছিল। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকার সদরঘাট থেকে ১৮টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। এসব লঞ্চ চাঁদপুর, বরিশাল, মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

লঞ্চ চলাচলের দ্বিতীয় দিনে যাত্রীদের কেউই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। লঞ্চগুলোও বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। ছবি: আসাদুজ্জামান
লঞ্চ চলাচলের দ্বিতীয় দিনে যাত্রীদের কেউই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। লঞ্চগুলোও বেশি যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। ছবি: আসাদুজ্জামান

সদরঘাটে যাত্রীদের কাউকে হাত ধুয়ে কিংবা হাত স্যানিটাইজ করে লঞ্চের ভেতর প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। লঞ্চের পক্ষ থেকেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় আজ সদরঘাটে একটি লঞ্চকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিআইডব্লিউটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহাবুব জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারণে একটি লঞ্চকে জরিমানা করা হয়েছে। যাত্রী পরিবহনের ব্যাপারে যেসব লঞ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করোনার ঝুঁকি এড়াতে যাত্রীদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।

গতকাল নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ' নৌপথে যাত্রী পরিবহন যদি আমাদের জন্য ঝুঁকি হয়ে যায়, তাহলে সরকারের এই সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত নয়। ১৫ দিনের সময়সীমা বিশ্লেষণ করে সরকার নিশ্চয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে তদারকির দায়িত্বে থাকা কোনো সরকারি কর্মকর্তা যদি দায়িত্বে অবহেলা করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো লঞ্চমালিক যদি স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখান, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’