বিভাগে আক্রান্তের ৪১ শতাংশই বরিশাল নগরের বাসিন্দা

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে মোট কোভিড–১৯ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০৭। তাঁদের মধ্যে ২৫২ জনই বরিশাল নগরের। যা বিভাগের ৬ জেলায় শনাক্ত মোট রোগীর ৪১ দশমিক ১৫ ভাগ।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, সোমবার নতুন শনাক্ত ৪৮ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪০ জন বরিশাল জেলার। এর মধ্যে বরিশাল নগর পুলিশের একজন অতিরিক্ত কমিশনার ও পুলিশ সদস্য এবং চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন ১৪ জন। এ ছাড়া পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলায় দুজন করে, বরগুনায় একজন ও ঝালকাঠিতে তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। বিভাগের ছয় জেলার মধ্যে বরিশালে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। এ জেলায় আক্রান্ত ৩১৯ জন। এ ছাড়া পটুয়াখালীতে ৬০ জন, ভোলায় ৪৩, পিরোজপুরে ৬৯, বরগুনায় ৬৬ ও ঝালকাঠিতে ৪৯ জন আক্রান্ত রয়েছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল জেলায় ৪০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৫ জনই বরিশাল নগরের বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে নগর পুলিশের একজন উপকমিশনারসহ ৭ পুলিশ সদস্য, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪ চিকিৎসক, ৩ নার্সসহ নগরের ৩৫ জন বাসিন্দা রয়েছেন। বাকি পাঁচজন জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

বিভাগে মোট আক্রান্তদের মধ্যে পুলিশের ৫৯, পুলিশ পরিবারের ৪ জনসহ ৬৩ জন; চিকিৎসক, নার্স মিলিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী রয়েছেন ৬৭ জন। নতুন শনাক্ত রোগীদের নিয়ে বরিশাল নগরে রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২৫২। যা বিভাগের ছয় জেলায় শনাক্ত মোট রোগীর ৪১ দশমিক ১৫ ভাগ। আর বরিশাল জেলায় মোট আক্রান্ত ৩১৯ রোগীর হিসাবে ৭৮ দশমিক ৯৯ ভাগ রোগী হচ্ছে বরিশাল নগরের বাসিন্দা।

আক্রান্তের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বরিশাল বিভাগের সর্বত্র মে মাসের শেষ দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বাড়ার হার বরিশাল নগরে বেশি। ক্রমশ স্থানীয় সংক্রমণের কেন্দ্র হয়ে উঠছে দক্ষিণের এ বিভাগীয় শহরটি। বরিশাল জেলায় গত ১২ এপ্রিল প্রথম দুজন করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের সংখ্যা ছিল দুই–আটের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এরপর ২১ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ থেকে ১৮ জনে। ৭ মে পর্যন্ত এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৯ জন। এরপর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আক্রান্তের এ সংখ্যা ২২ জন বেড়ে দাঁড়ায় ৭১। তৃতীয় সপ্তাহে ৫৩ জন বেড়ে এ সংখ্যা হয় ১২৪। আর ২১ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত এ সংখ্যা আরও ১০৬ জন বেড়ে দাঁড়ায় ২৩০। মে মাসের শেষ ২ দিনে এ সংখ্যা আরও ৪৯ জন বেড়ে দাঁড়ায় ২৭৯। আর জুনের প্রথম দিনে তা আরও বেড়ে দাঁড়াল ৩১৯। এর মধ্যে বরিশাল নগরেরই ২৫২ জন।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সাধারণ মানুষের উদাসীনতা এবং লকডাউন শিথিলতার কারণে বরিশাল নগর ও জেলাগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটা খুব উদ্বেগের বিষয়। গত চার দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বলে দিচ্ছে আমরা খুব দ্রুত বড় ধরনের বিপদের দিকে এগোচ্ছি। এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরাও ব্যাপক হারে সংক্রমিত হচ্ছেন। পুরো বিভাগের সংক্রমণের উৎসে পরিণত হয়েছে বরিশাল শহর।’

শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের গাড়িচালক আক্রান্ত হওয়ায় পরিচালক হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যরাও ব্যাপক সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এটা রোধ করতে হলে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করাই একমাত্র সমাধান।