পিতার মৃত্যুর শোক নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া আমিরুল জিপিএ-৫ পেয়েছে

এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগের দিন বাবাকে হারিয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার আমিরুল ইসলাম। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া বাবার লাশ দাফন করে পরদিন থেকেই সে একে একে সব কটি পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত রোববার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় আমিরুল জিপিএ-৫ পেয়েছে। পরীক্ষার সব কটি বিষয়েই তাঁর জিপিএ–৫ এসেছে।

আমিরুল উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের মুক্তারামপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে। সে উপজেলার সলিমগঞ্জ এ আর আম উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে আমিরুলের আসন দেখতে উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের সলিমগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে যান খোরশেদ আলাম (৬৮)। সে সময় বিদ্যালয়ে প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় খোরশেদ তোরণের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কয়েকজন পরীক্ষার্থী তোরণের ওপরে উঠে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এমন সময় বিদ্যালয়ের তোরণের ওপরের অংশ ভেঙে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা খোরশেদ আলমের মাথায় পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ওই দিনই বাবার লাশ দাফন করে আমিরুল ও পরিবারের লোকজন। পরদিন থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় আমিরুল।

সলিমগঞ্জ এ আর আম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, আমিরুল অনেক ভালো ছেলে এবং একজন মেধাবী ছাত্র। তার দৃঢ় মনোভাবের কারণেই বাবার লাশ কবরে দাফন করে পরদিন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছে। মেধার স্বাক্ষরও রেখেছে আমিরুল। তিনি বলেন, ‘আমার ২৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এত আনন্দ পাইনি, আমিরুলের রেজাল্ট দেখে যতটুকু আনন্দ পেয়েছি। আমার নিজের সন্তানও এই স্কুল থেকে গোল্ডেন জিপিএ–৫ পেয়েছে।’

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ২২৪ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৭৬ জন পরীক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৩ জন। বিদ্যালয়ে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। পিতার মৃত্যুর শোক বহন করে পরীক্ষা নিয়েও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১১৫০ নম্বরসহ গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সবার নজর কেড়েছে আমিরুল।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকাররম হোসেন বলেন, ‘আমিরুলের এই ফলাফল সত্যিই খুব আনন্দের। এই ফলাফল আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন তার পাশে থাকবে।’