চাল কেলেঙ্কারিতে আ.লীগ নেতার ডিলারশিপও বাতিল

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৪১ বস্তা (এক বস্তায় ৫০ কেজি) চাল কেলেঙ্কারির মামলায় পলাতক বগুড়ার কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি টি এম ছানাউল্লাহ তালুকদারের ডিলারশিপ (পরিবেশক) বাতিল করা হয়েছে। এর দুই দিন আগে একই ঘটনায় তাঁকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগ।

এদিকে দুপচাঁচিয়া উপজেলায় প্রবাসীদের নামে চাল তুলে আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির একজনের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। আরেকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটি।

কাহালু উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার টি এম ছানাউল্লাহ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের ৫০ কেজি ওজনের ৪১ বস্তা চাল দরিদ্রদের মধ্যে বিক্রি না করে গুদামে মজুত করেন। ঈদের আগের দিন কালোবাজারে বিক্রির জন্য ওই ৪১ বস্তা চাল পাচারের সময় জনতা উপজেলার কাজীপাড়া এলাকা থেকে তা আটক করে পুলিশে খবর দেন। কাহালু থানার পুলিশ চালগুলো জব্দ করে ছানাউল্লাহর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে। এরপর থেকে ছানাউল্লাহ পলাতক।

চাল কেলেঙ্কারির এ ঘটনায় শনিবার বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে টি এম ছানাউল্লাহকে দলীয় পদ থেকে অব‍্যাহতির বিষয়টি জানানো হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চাল আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত নেতাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানানো হয়।

আজ সোমবার কাহালু খাদ্যবান্ধব কমিটির সভায় বীরকেদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি টি এম ছানাউল্লাহ তালুকদারের চাল কেলেঙ্কারির বিষয়টি উঠে আসে। পরে কমিটি তাঁর ডিলারশিপ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাছুদুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান আল হাসিবুল হাসান, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অরুণ কুমার প্রামাণিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইউএনও মাছুদুর রহমান বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৪১ বস্তা চাল কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে পাচারের ঘটনায় টি এম ছানাউল্লাহ তালুকদারের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তাঁর ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নে প্রবাসীদের নামে চাল তুলে আত্মসাৎসহ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইউনুস আলী নামের একজনের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। বকুল হোসেন নামের আরেকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি এবং ইউএনও এস এম জাকির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বন তেঁতুলিয়া গ্রামের খোরশেদ আলীর নামে বরাদ্দ দেওয়া কার্ড দেখিয়ে চার বছর ধরে নিয়মিত প্রতি দফায় ৩০ কেজি করে চাল উত্তোলন করা হয়। খোরশেদ আলী গত ২৫ এপ্রিল জানতে পারেন, তাঁর নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড বরাদ্দ রয়েছে। ওই রাতেই তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ২৭ এপ্রিল ছেলে রফিকুল ইসলাম তাঁর বাবার নামে গোপনে কার্ড বরাদ্দ দেখিয়ে সরকারি চাল আত্মসাতের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত আবেদন করেন। এ ছাড়া ২১ ব্যক্তির নামে চাল উত্তোলনে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ তুলে দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দাখিল করা হয়। এ নিয়ে গত ১০ মে ‘প্রবাসীদের নামেও কার্ড বরাদ্দ’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন ছাপা হয়।

ইউএনও জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় গঠন করা দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ডিলারের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইউনুস আলীর ডিলারশিপ বাতিল এবং বকুল হোসেনকে শোকজ করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। ব্যাখ্যা পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।