বগুড়ায় ১৩ ছাত্রীকে জিম্মি করল হোস্টেল কর্তৃপক্ষ

করোনা পরিস্থিতিতে ৩ মাসের ভাড়া শোধ না দেওয়ায় বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের ১৩ ছাত্রীকে জিম্মি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে একটি বেসরকারি ছাত্রী হোস্টেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে কলেজের নতুন ভবনসংলগ্ন কামারগাড়ি রেডি লাইট কমপ্লেক্স এলাকায় মুন্নুজান ছাত্রী হোস্টেলে এ ঘটনা ঘটে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি আজিজুল হক কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী কামারগাড়ি এলাকার বেসরকারি এই হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন। প্রশাসনের নির্দেশে গত ১৯ মার্চ থেকে তাঁরা হোস্টেল ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। কিন্তু হোস্টেলের মালিক মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চার মাসের ভাড়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল পরিশোধের জন্য প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেন। চাপের কারণে ইতিমধ্যে তাঁরা মার্চ মাসের ভাড়া শোধ করেছেন।

ভুক্তভোগী তিনজন শিক্ষার্থী বলেন, আজ থেকে গণপরিবহন চালু হওয়ায় তাঁরা ১৩ জন ছাত্রী হোস্টেলে আসেন। কক্ষে ঢুকে দেখেন তাঁদের বিছানাপত্র তছনছ করা। পরিধেয় কাপড়চোপড় ও মূল্যবান জিনিসপত্র নেই। এ বিষয়ে তাঁরা হোস্টেলের সুপার হাফিজা বেগমের কাছে জানতে চান। তিনি সদুত্তর দিতে না পারায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে আতঙ্কে তাঁরা হোস্টেল ছেড়ে নিজ নিজ বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু হোস্টেল সুপার তাঁদের কাছে জুন মাস পর্যন্ত তিন মাসের ভাড়া দাবি করেন। তাঁদের কাছে ভাড়ার টাকা না থাকায় দিতে ব্যর্থ হন। এ সময় তাঁদের হোস্টেলে তালাবদ্ধ করে জিম্মি করে রাখা হয়। ভাড়ার টাকা শোধ না দেওয়া পর্যন্ত কাউকে যেতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় ছাত্রীরা ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন। একপর্যায়ে ছাত্রীরা পুলিশকে খবর দিলে শহরের স্টেডিয়াম ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে জিম্মি দশা থেকে তাঁদের উদ্ধার করে।

ঘটনা সম্পর্কে মুন্নুজান হোস্টেলের সুপার হাফিজা বেগম বলেন, ছাত্রীরা বকেয়া ভাড়া শোধ না করেই জিনিসপত্র নিয়ে হোস্টেল ছাড়তে চাইলে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, হোস্টেল ছাড়তে হলে বকেয়া দুই মাসের ভাড়া শোধ দিতে হবে। কিন্তু ছাত্রীরা ভাড়া না দিয়েই হোস্টেল ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।

শহরের স্টেডিয়াম ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভাড়ার জন্য ১৩ ছাত্রীকে হোস্টেলে আটকে রাখা হয়েছিল। অবরুদ্ধ ছাত্রীদের মুক্ত করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রীরা পরে বকেয়া শোধ করবেন বলে হোস্টেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য কাউকে আটকে রাখা যাবে না।

এর আগে বকেয়া ভাড়ার জন্য গত ১৮ মে কামারগাড়ি শিউলী ছাত্রীনিবাসে ৫ ছাত্রীকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৭ মে ও ২০ মে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মেসভাড়ার ব্যাপারে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।