আরও জমল ধলা সোনা, আরও সুন্দর ধলাইমুখ

কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদা পাথর’ এলাকায় পাহাড়ি ঢলে পড়েছে নতুন পাথরের স্তূপ। ছবি: প্রথম আলো
কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদা পাথর’ এলাকায় পাহাড়ি ঢলে পড়েছে নতুন পাথরের স্তূপ। ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের নতুন পর্যটনকেন্দ্র কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ভোলাগঞ্জে ‘সাদা পাথর’ এলাকায় পাহাড়ি ঢলে আরও পাথর জমা হয়েছে। পাথরের নতুন স্তূপ যাতে সংরক্ষিত থাকে, সে জন্য উপজেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠি দিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

পুরো এলাকায় নতুন করে পাথরের স্তূপ পড়েছে। সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে ধলাই নদ অববাহিকা এলাকাতেও নতুন পাথর জমা পড়েছে। পাঁচ একর জায়গায় নতুন পাথরের আরেকটি স্তূপ পড়েছে। এতে সাদা পাথর এলাকা দেখতে আগের চেয়ে আরও সুন্দর হয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্য বলেন, ২৬ মে থেকে টানা তিন দিন বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামে। তৃতীয় দিন বৃষ্টি না হওয়ায় সাদা পাথর এলাকায় একদল পরিদর্শক পাঠিয়ে নতুন করে পাথরের স্তূপ পড়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আসা পাথরগুলো যথাযথভাবে যাতে সংরক্ষণে থাকে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে চিঠি দিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সীমান্তের ধলাই নদের উৎসমুখে সাদা পাথর এলাকার অবস্থান। ও পারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি, এ পারে ধলাই নদের উৎসমুখের বিস্তৃত এলাকায় সারা বছর নদের পানি প্রবহমান থাকে। বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জির পাদদেশ থেকে বর্ষায় ঢলের পানির সঙ্গে পাহাড়ের পাথরখণ্ড এপারে নেমে আসে। ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলে পাথর জমা হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জের তৎকালীন ইউএনও আবুল লাইছ পাথর সংরক্ষণ করেন। এ নিয়ে ২০১৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘ধলাইমুখে আবার জমল ধলা সোনা’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেই থেকে এলাকাটি ‘সাদা পাথর’ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়।

দূরে পাহাড়, হাতের নাগালে সাদা পাথর। অপরূপ সুন্দর প্রকৃতি। ছবি: প্রথম আলো
দূরে পাহাড়, হাতের নাগালে সাদা পাথর। অপরূপ সুন্দর প্রকৃতি। ছবি: প্রথম আলো

সিলেট অঞ্চলে সীমান্ত এলাকায় পাহাড়-নদী-পাথরকেন্দ্রিক প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দির পর সাদা পাথর এলাকা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে পড়ে। ব্যাপক পর্যটক যাতায়াতে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ‘সাদা পাথর পরিবহন’ নামে বাস সার্ভিসও চালু হয়েছে। প্রতিদিন সেখানে ১০ হাজার পর্যটকের পদচারণ ঘটে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সিলেট লকডাউন ঘোষণার পর থেকে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ বাংলাদেশের অন্যতম বড় পাথরকোয়ারি। এক পাশে রেলওয়ের রজ্জু পথের (রোপ ওয়ে) সংরক্ষিত এলাকাও রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে পাহাড়ি ঢলে জমা হওয়া সাদা পাথরের স্তূপ ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র। প্রায় পাঁচ একর জায়গার ওপরে পাথরের অন্তত ১৩টি আস্তরণে প্রায় ২০ ফুট পুরু পাথরের স্তর জমেছে। স্থানটির অধিকাংশ পড়েছে পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, ১৯৯০ সালে পাহাড়ি ঢলে পাথর জমা হতে থাকে। কিন্তু সেগুলো সংরক্ষণ না করায় লুটপাট হয়েছিল। প্রায় দুই যুগের বেশি সময়ের পর ২০১৭ সালের বর্ষাকালে আবার পাথর জমা হওয়ায় স্থানীয় মানুষ পাথর লুটপাটের বিরুদ্ধে নামে। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করায় পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে গোটা এলাকা।

লকডাউন ঘোষণার পর থেকে পর্যটনশূন্য থাকায় সেখানকার পাথর সংরক্ষিত থাকা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের চিঠি পেয়ে তিনি ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণে রেখেছেন পুরো এলাকা। সম্প্রতি দুই দফা পরিদর্শন করে দেখেছেন, পুরো এলাকা নতুন করে পাথরের স্তূপ পড়েছে। এ ছাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে ধলাই নদ অববাহিকা এলাকায় নতুন পাথর জমা পড়েছে। পাঁচ একর জায়গায় নতুন পাথরের আরেকটি স্তূপ পড়েছে। এতে সাদা পাথর এলাকা দেখতে আগের চেয়ে আরও সুন্দর হয়েছে। বর্তমানে পর্যটকশূন্য থাকায় নতুন করে আসা পাথরগুলো যাতে লুট না হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই জনপ্রতিনিধি। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

সাদা পাথর এলাকা সীমান্তের শূন্যরেখার (জিরো পয়েন্ট) পাশাপাশি হওয়ায় সেখানে বিজিবির একটি ফাঁড়ি থেকে দেখাশোনা করা হয় বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এর বাইরে পুলিশেরও বিশেষ নজরদারি রয়েছে জানিয়ে ইউএনও সুমন আচার্য বলেন, নতুন পাথরের স্তূপে বিশেষ নজরদারির জন্য উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। সেখানে রাতে পাথর চুরির শঙ্কা থাকায় রাতে পালা করে পুলিশ ও বিজিবি নজরদারি করবে।