সৌদি থেকে ফিরে মানব পাচারে জড়ান কুষ্টিয়ার কামাল

সম্প্রতি লিবিয়ায় গুলি করে ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনায় জড়িত মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম ব্যক্তি কুষ্টিয়ার কামাল উদ্দীনের গ্রামের বাড়ি। ছবি: প্রথম আলো
সম্প্রতি লিবিয়ায় গুলি করে ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনায় জড়িত মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম ব্যক্তি কুষ্টিয়ার কামাল উদ্দীনের গ্রামের বাড়ি। ছবি: প্রথম আলো

ডিগ্রি (পাস কোর্স) পরীক্ষায় ফেল করার পর বাড়ি ছেড়ে চলে যান কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খোর্দ আইলচারা গ্রামের কামাল উদ্দীন (৫৫)। এরপর ঢাকা থেকে সৌদি আরবে কাজ করতে যান। সেখানে প্রায় দুই বছর রাজমিস্ত্রির কাজ করে তিনি দেশে ফিরে আসেন। জড়িয়ে পড়েন মানব পাচারে। এ কাজের জন্য তাঁর কোনো লাইসেন্স নেই। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শতাধিক মানুষকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। এসব লোকজনের বেশির ভাগই লিবিয়ায় গেছেন।

কামাল উদ্দীনের পরিবার ও তাঁর গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। গত সোমবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলশান থানার শাহজাদপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব–৩–এর একটি দল। কামাল লিবিয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম।

তবে কামালের বড় ভাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লুৎফর রহমান প্রথম আলোর কাছে দাবি করে বলেন, ‘কামাল বিদেশে মানুষ পাঠাত, এটা ঠিক। তবে কারও টাকা মেরে দেয়নি। সৎভাবেই সবকিছু করত। তার পজিশন খুবই সামান্য। তার কোনো লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান নাই। সে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করত। যদি কেউ কিছু করে থাকে, সেটা ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন। তাদের ধরা হোক।’

গতকাল মঙ্গলবার র্খোদ আইলচারা গ্রামে গিয়ে কামালের নাম জিজ্ঞেস করতেই লোকজন চিনলেন। তাঁদের ভাষ্য, কামাল একজন ভালো মানুষ। প্রায় ২০ বছর আগে তিনি গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে যান। এর পর থেকে নিজের গ্রামসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের অন্তত ১০০ জনকে টাকার বিনিময়ে বিদেশে পাঠিয়েছেন। বছরে তিন–চারবার বাড়িতে আসতেন। কয়েক দিন থাকার পর ঢাকায় চলে যেতেন। এলাকায় তিনি বেশ দানখয়রাত করেন।

কামালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর একতলা তিন কক্ষের একটি ছাদের বাড়ি। গ্রামে গেলে তিনি এখানেই থাকেন। তিনি স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় শাহজাদপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বাড়িতে তাঁর মাসহ ভাইয়েরা পৃথক বাড়িতে থাকেন।

কথা প্রসঙ্গে কামাল উদ্দীনের বড় ভাই লুৎফর রহমান বলেন, এইচএসসি পাসের পর কামাল রাজবাড়ীতে ডিগ্রিতে ভর্তি হন। ফেল করার পর ঢাকায় পালিয়ে যান। সৌদি আরবে গিয়ে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। দুই বছর পর ফিরে বিদেশে মানুষ পাঠানোর কাজে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকায় টাইলস মিস্ত্রির কন্ট্রাক্টরের কাজের পাশাপাশি বিদেশে মানুষ পাঠানোর কাজ করেন। তাঁর দাবি, ভাই কোনো অবৈধ কাজে যুক্ত না। ভাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত দাবি করে তিনি বলেন, ‘করোনা পরীক্ষার জন্যও নমুনা দিয়েছে কামাল।’

গ্রামের এক দোকানদার বলেন, ‘কামালের এলাকায় খুব নামধাম শুনি। ভালো টাকাপয়সা হয়ছে। এলাকায় দানখয়রাত করেন। তাঁর মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে হয়রানি হয়েছে, এটা জানা নাই। তাঁরে ধরার খবর টিভিতে দেখছি।’ এক কৃষকের ভাষ্য, ‘কাউকে বিদেশে পাঠাতে না পারলে কামাল তার টাকা ফেরত দিত।’

গত ২৮ মে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এতে আহত হন ১১ জন। বাংলাদেশিসহ ওই অভিবাসীদের লিবিয়ার মিজদা শহরে জিম্মি করে রেখেছিল মানব পাচারকারী চক্র। এ নিয়ে একপর্যায়ে ওই চক্রের সঙ্গে মারামারি হয় অভিবাসীদের। এক মানব পাচারকারী নিহত হন। এরপর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।