রাশেদ চিশতীর জামিন বাতিল

রাশেদুল হক চিশতী। ছবি: সংগৃহীত
রাশেদুল হক চিশতী। ছবি: সংগৃহীত

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের এক মামলায় ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীকে নিম্ন আদালতের দেওয়া জামিন বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীর উপস্থিতিতে পুনরায় জামিন শুনানি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওই মামলায় জামিন মঞ্জুর করে নিম্ন আদালতের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে দুদকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। দুদকের আবেদন নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেওয়া হয়।

আইনজীবীদের তথ্যমতে, রাশেদ চিশতীর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ ও ১৯ মে ঢাকার আদালত থেকে চারটি মামলায় জামিন পান তিনি। টাঙ্গাইলের দায়রা আদালত থেকে অপর একটি মামলায় ২৭ মে জামিন পান তিনি।

পাঁচ মামলায় রাশেদ চিশতীর জামিনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে পৃথক আবেদন করে দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ মে একটি মামলায় হাইকোর্ট রাশেদ চিশতীর জামিন দুদকের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেন। অপর তিনটি মামলার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট গতকাল শর্তসাপেক্ষে রাশেদ চিশতীকে নিম্ন আদালতের দেওয়া জামিন বহাল রাখেন।

ফারমার্স ব্যাংকের বকশীগঞ্জ শাখা থেকে ৯ কোটি ২৮ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সদর থানায় রাশেদ চিশতীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলাটি করে দুদক। এই মামলায় ২৭ মে টাঙ্গাইলের বিশেষ জজ আদালত থেকে জামিন পান তিনি। এই জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের করা আবেদনের ওপর আজ হাইকোর্টে শুনানি হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন।

রাশেদুল হক চিশতীর পক্ষে ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শাহরিয়া কবির।

পরে খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, টাঙ্গাইলের ওই মামলায় নিম্ন আদালতে করা রাশেদ চিশতীর জামিন আবেদনের কপি দুদকের আইনজীবীকে দেওয়া হয়নি। দুদককে না শুনে একতরফাভাবে জামিন দেওয়া হয়। হাইকোর্ট ওই জামিন বাতিল করেছেন। দুদককে জামিন আবেদনের কপি দিয়ে ও দুদকের উপস্থিতিতে আবেদনের শুনানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এখন পুনরায় জামিন আবেদনের শুনানি হবে। এর ফলে রাশেদ চিশতী কারামুক্তি পাচ্ছেন না।

চিশতীর আইনজীবী শাহরিয়া কবির প্রথম আলোকে বলেন, টাঙ্গাইলের আদালতে রাশেদ চিশতীর জামিন আবেদন শুনানির সময় পাবলিক প্রসিকিউটর উপস্থিত ছিলেন। তবে দুদকের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় হাইকোর্ট দুদকের আইনজীবীর উপস্থিতিতে নিম্ন আদালতে পুনরায় রাশেদ চিশতীর জামিন আবেদনের শুনানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

আইনজীবীদের তথ্যমতে, ফারমার্স ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনায় পৃথক মামলা করে দুদক। এর মধ্যে ১৫৯ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী, তাঁর স্ত্রী রুজী চিশতী ও ছেলে রাশেদুল হক চিশতীসহ সাত জনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল গুলশান থানায় একটি মামলা করে দুদক। এই মামলায় ১৯ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ হতে জামিন পান তিনি। এর বিরুদ্ধে দুদক হাইকোর্টে আবেদন করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০ মে প্রথমে হাইকোর্টের অপর বেঞ্চ ২৮ মে পর্যন্ত রাশেদ চিশতীর জামিন স্থগিত করেন। পরে ২৮ মে আপিল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত রাশেদুল চিশতীর জামিন স্থগিত করা হয়।

এ ছাড়া জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে, মাহবুবুল হক চিশতীকে আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও দুদক আইনে রাশেদ চিশতীর বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা রয়েছে।