‘আমি একলা মানুষ। মাইনষের বাড়ি থাহি। স্বামী নাই, পোলাপাইন নাই। এহন কোনো কামও নাই। এই টাকায় আমার লাখ টাকার উপকার হইল,’ বলছিলেন সরিষাবাড়ীর সোনাকান্দর গ্রামের সুফিয়া বেগম। আর গাইবান্ধার জুলেখা বেগম বলেন, ‘বাবা, এই ট্যাকা দিয়া মোর চিকিৎসা করাম। টাকার অভাবে স্যালাইন দিবার পাতিছম না।’
প্রথম আলো বন্ধুসভার রোজার ঈদের কর্মসূচি ‘সহমর্মিতার ঈদ’ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এমন হাজারও গল্পের দেখা মিলেছে। ‘ঘরে বসেই ভাগাভাগি হোক ঈদ আনন্দ’ প্রতিপাদ্যে সহমর্মিতার ঈদ কর্মসূচিতে মোট ১১৩টি বন্ধুসভা অংশ নেয়।
সারা দেশের বন্ধুরা তাঁদের নিজস্ব অর্থায়নে ৪ হাজার ৬৬৩টি পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট ২৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৬০ টাকা ঈদ উপহার দিয়েছেন। প্রতিটি পরিবারকে ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে। সর্বোচ্চসংখ্যক অসহায় পরিবারকে অর্থসহায়তার ভিত্তিতে ১০টি বন্ধুসভাকে সেরা নির্বাচন করা হয়েছে। বন্ধুসভাগুলো হলো যশোর, জামালপুর, রংপুর, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর ও রাজশাহী। সেরাদের সেরা হয়েছে যশোর বন্ধুসভা, তারা মোট ৪৩৩টি পরিবারকে সহযোগিতা করেছে।
গত ৯ মে বন্ধুসভার উপদেষ্টা জান্নাতুল বাকেরের প্রস্তাবনায় প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এই কার্যক্রম শুরু হয়। কর্মসূচি চলে ঈদের ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত। কর্মসূচির ঘোষণায় ছিল, একটি বন্ধুসভাকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কমপক্ষে দুটি অসহায় পরিবারকে ঈদের দিনের খাবারের অর্থসহায়তা প্রদান করতে হবে।
এই কর্মসূচিতে কাজ করার অভিজ্ঞতায় বন্ধুরা অসহায় মানুষের অসংখ্য মর্মস্পর্শী কাহিনি লিখে পাঠিয়েছেন। অনেক বন্ধু বলেছেন, ‘টাকা পাঠিয়ে যখন খোঁজ নিতে ফোন করেছি, তখন অনুভব করেছি এই মানুষগুলোর মুখের হাসি।’
সারা বাংলাদেশে বন্ধুসভার সংগঠনগুলো এই তহবিল গড়ে তুলেছিল নিজেদের চাঁদা, পরিবার-পরিজনদের এবং উপদেষ্টাদের আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে। জাতীয় কমিটির সদস্যরাও অনেকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেন। যশোরে একজন অভিভাবক একাই দেন ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। ঢাকায় একজন উপদেষ্টার মাধ্যমে আসে দুই লাখ টাকা। আবার বন্ধুরা কেউ একটি পরিবার, কেউবা চারটি পরিবারের জন্য চাঁদা দেন। এইভাবে বিন্দু বিন্দু করেই ২৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকার বেশি বিতরণ করা সম্ভব হয়।
এ ছাড়া করোনাকালে ‘প্রজেক্টস ফর হিউম্যানিটি’র সহযোগিতায় ‘চাঁদের হাসি’ নামের কর্মসূচিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বন্ধুসভা আরও ২০০টি পরিবারকে অর্থসহায়তা দিয়েছে।
প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ড. মুমিত আল রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক মৌসুমী মৌয়ের নেতৃত্বে সহমর্মিতার ঈদ কর্মসূচি সমন্বয় করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহতারিমা রহমান। সহযোগিতায় ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক আবদুল ওহাব।
এর বাইরে প্রথম আলা ট্রাস্ট ত্রাণ তহবিলের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ৯ জেলায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বন্ধুসভা।