রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩% নারী রাখার শর্ত বদলের ইঙ্গিত

চলতি বছরের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব থাকার আইনি বাধ্যবাধকতাকে ‘অবাস্তব’ ও ‘অকার্যকর’ বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনের কোনো কোনো সদস্য। এ কারণে ২০০৮ সালে বিগত শামসুল হুদা কমিশনের করা এই আইনি বাধ্যবাধকতাটি বাতিল বা পরিবর্তন করার চিন্তা করছে বর্তমান নূরুল হুদা কমিশন।

কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) আইনে থাকা রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের অংশটিকে নিয়ে আলাদা আইন করার কথা ভাবছে। সে ক্ষেত্রে কমিশনকে আরপিওতেও পরিবর্তন আনতে হবে। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, পুরো প্রক্রিয়া এখনো খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। গত সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিষয়টি তোলা হলেও এ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার টেলিফোনে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিশনের সভায় নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সভায় একজন বলেছেন, এ বিধানের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। তা ছাড়া যেসব বিষয় যেমন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিষয়টিও কোনো দলই মানছে না, এ বিষয়ে আলোচনা হবে। মো. আলমগীর বলেন, নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কমিশন রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের মতামত নিতে ডাকতে পারে। আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় আছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই অধ্যাদেশ সংসদে পাস করে।
২০০৮ সালে ভোটে অংশ নিতে দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। ওই সময় নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলো প্রতিশ্রুতি করে, ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখবে তারা। অবশ্য দলগুলো এই শর্ত বাতিলের দাবি না জানালেও কমিশনই মনে করছে, শর্ত অবাস্তব ও অকার্যকর।

২০১৮ সালে দলে এক-তৃতীয়াংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব রাখার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান জানতে চেয়ে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে ৪০টি দলের মধ্যে ১০টি দল কমিটিতে নারী নেতৃত্বের বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে কমিশনকে জানায়। এর মধ্যে একটিমাত্র দল গণফ্রন্ট তাদের নেতৃত্বে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি আনতে পেরেছিল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটিতে ৮১ জনের ১৯ জন নারী। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টির কমিটিতে ২০ শতাংশ নারী রয়েছেন।

এ বিষয়ে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শর্ত শিথিল করার আলোচনা হচ্ছে বলে আমিও শুনেছি। যদি এ শর্ত শিথিল করা হয় তবে তা হবে অবিশ্বাস্য। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিধান মানতে বাধ্য করার দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের। সে ক্ষমতাও আছে কমিশনের। কিন্তু রাজনৈতিক দল মানছে না, মানতে চাচ্ছে না এ ধরনের অজুহাতে কমিশন এ শর্ত থেকে সরে আসতে পারে না।’