রোবট হয়েছে মানুষ

ঘরবন্দী শহরের মানুষ ফিরতে চান গ্রামের মেঠোপথে। ফাইল ছবি
ঘরবন্দী শহরের মানুষ ফিরতে চান গ্রামের মেঠোপথে। ফাইল ছবি
>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ–বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ–বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

একটি মুদ্রায় যেমন এপিঠ–ওপিঠ থাকে, ঠিক তেমনি প্রতিটা কাজেরই ভালো ও খারাপ দিক থাকে। ঠিক যেমন, করোনাভাইরাস হাজারো মানুষের প্রাণ নিয়ে যাওয়ার পথে কিছু মানুষরূপী রোবটকে সত্যিকারের মানুষ বানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এ পৃথিবীটা যে শুধু মানুষদের একার গ্রাস করার জায়গা নয়, অন্য প্রাণীদেরও যে এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার রয়েছে তা মানুষদের শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।

সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা অবধি বাইরে থাকার পর এই ক্লান্ত অসাড় দেহ নিয়ে আর ইচ্ছে করত না বসার ঘরে গিয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে বসে একটু গল্প করি। প্রতিনিয়ত হাজারো নিয়মনীতি আর নিত্যদিনের কাজের বেড়াজালে আষ্টেপৃষ্ঠে যাচ্ছিলাম।

বাইরে টিউশন করালেও বাসায় আমার ভাইদের পড়ানোও যে আমার একটি গুরুদায়িত্ব, তা হয়তো ভুলেই গিয়েছিলাম, নিজের ঘরে একা বসে নেটফ্লিক্সে ওয়েব সিরিজ দেখার চেয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে বসে বিটিভিতে হুমায়ূন আহমেদের লেখা নব্বই দশকের নাটক দেখায় যে কতটা আনন্দ পাওয়া যায়, তা আমি জানতাম না। বিভিন্ন রঙে রাঙানো রঙিন ছবি আকলে যে নিজের মনও রঙিন হয়ে ওঠে, তা আগে বুঝতাম না, আমার বারান্দায় ঘুঘু জোড়ার যে চোখ লাল, তা আগে খেয়াল করার সুযোগ পাইনি, খুব আশ্চর্যজনকভাবে মা পাখিটার মানুষদের মতো করে সময়জ্ঞান না থাকলেও সে যে তার বাচ্চাদের ঠিক ২ ঘণ্টা পরপরই খাওয়ায়, আগে তা আমি জানতামও না, শেষ কবে প্রিয় গান শুনতে শুনতে বৃষ্টির দিনে বারান্দায় বসে কফির কাপে চুমুক দিয়েছিলাম, তা ঠিক মনে নেই। আগে প্রতিদিন আজান শুনলেও আমার বাড়ি থেকে একটু দূরেই যেই মাজারটা রয়েছে সেখানকার খাদেমের দেওয়া আজানের ধ্বনি যে এত সুমধুর, তা আগে কখনো মনোযোগ দিয়ে শুনিনি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দূরের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে রাখতে কবে যে কাছের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, তা আমি খেয়াল করিনি। মানুষরূপী রোবট থাকায় হয়তো চারপাশে ঘটে যাওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এই ব্যাপারগুলো আগে কখনো আমার চোখে পড়েনি।

কর্মব্যস্ততায় ভরপুর পৃথিবীটা আমাদের মতো কিছু মানুষদের একটু অবসর দিয়েছে, যাতে আমরা আমাদের নিজ সত্তাকে চিনি কেননা কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘নিজকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনি এত বড় একটা জোর আসে যে সে আপন সত্য ছাড়া আর কাউকে কুর্নিশ করে না’ যাতে করে এমন দুর্দিনে এ দেশের বুকে আঠারো নেমে আসে!

*শিক্ষার্থী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি