লঞ্চের যাত্রীর সংখ্যা সীমিত করে দেবে বিআইডব্লিউটিএ

একটি লঞ্চ কতজন যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে, তা দু-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করে দেবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটি লঞ্চ কতজন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে, সেটি দু-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করে দেওয়া হবে। প্রতিটি লঞ্চের নাম উল্লেখ করে সেখানে বলা থাকবে লঞ্চটি কতজন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

যাত্রী পরিবহনের নীতিমালা না থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোনো লঞ্চই যাত্রী পরিবহন করছে না। এই কারণে কোনো যাত্রীর পক্ষে ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার চরম ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে যাত্রীরা।

বিআইডব্লিউটিএর সদরঘাটের পরিবহন পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেও যাত্রীদের সচেতন করতে পারছি না। গাদাগাদি করে যেভাবে যাত্রীরা লঞ্চে করে যাতায়াত করছে, তাতে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।’

লঞ্চ চলাচলের পঞ্চম দিনেও আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় সদরঘাটে দেখা যায়, ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীরা চলাচল করছে না। প্রবেশপথে গাদাগাদি করে সবাই লঞ্চঘাটে প্রবেশ করছে। কয়েকটি প্রবেশপথে জীবাণুমুক্তকরণ টানেল নষ্ট থাকায় লোকজন যে যার মতো করে ঘাটে প্রবেশ করছে। লঞ্চঘাটে একাধিক হকারও দেখা গেছে। হকাররা পল্টুনে থাকার পাশাপাশি লঞ্চের ভেতরও বেচাকেনা করছেন। কেউই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। তবে লঞ্চগুলো যাত্রী তোলার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছে। কয়েকটি লঞ্চ যাত্রীদের তাপমাত্রাও পরীক্ষা করছে।

বরিশালগামী একটি লঞ্চের যাত্রী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যাত্রীরা সচেতন হলেই কিন্তু করোনার হাত থেকে রক্ষা পাব না। আমরা লঞ্চের যাত্রীরা তো ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারছি না। করোনার হাত থেকে যদি যাত্রীদের রক্ষা করতে হয়, তাহলে সীমিতসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচল করা উচিত লঞ্চের।’

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বলেন, ‘লঞ্চমালিকদের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক হয়েছে। সেখানে যাত্রীসংখ্যা সীমিত করে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। আমরা দু-এক দিনের মধ্যে যাত্রীর সংখ্যা সীমিত করে দিয়ে নোটিশ দেব। লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে টেকনিক্যাল কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেলে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

লঞ্চ চলাচলের প্রথম পাঁচ দিনে দেখা গেছে, লঞ্চের যাত্রীদের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতার হার বেড়েছে। এ ব্যাপারে লঞ্চগুলোর প্রবেশপথে দায়িত্ব পালনকারী বিআইডব্লিউটিএর কর্মচারীদের সতর্ক থাকতে দেখা গেছে। তবে ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজরদারি কম। পল্টুনে যাত্রীরা আগের মতো গাদাগাদি করে একত্রে অবস্থান করছে। লঞ্চে ঢোকার পর আবার বের হচ্ছে। কেউই কোনো নিয়ম মানছে না।

বিআইডব্লিউটিএর সদরঘাটে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা বলছেন, ‘সব সময় মাইকিং করা হচ্ছে। জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলছি। কিন্তু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করছে না। তবে লঞ্চগুলো আগের থেকে সচেতন হয়েছে।’

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সদরঘাট টার্মিনালে সব সময় মাইকিং করা হচ্ছে। মুখে মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। তারপরও কিন্তু যাত্রীদের অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। আর লঞ্চঘাটে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ব্যাপারে আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করে যাচ্ছি।’