মেহেন্দীগঞ্জে মাদ্রাসার কর্মচারীকে হেনস্তা, চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৩

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় একটি মাদ্রাসার অফিস সহকারীকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তার ঘটনায় এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার বিকেলে হেনস্তার ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম উপজেলার দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী। এ ঘটনায় তিনি গতকাল বুধবার রাতে মেহেন্দীগঞ্জ থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় দড়িচর-খাজুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি, সত্তার সিকদার, কবির সিকদার, ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) শহিদুল ইসলাম, মাসুদ সিকদার, আবুল বয়াতী, ইউনুস বয়াতী, মোসলেম সিকদার, বজলু আকন ও মশিউর রহমান বয়াতীকে আসামিকে করেছেন।

জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরিশালের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সদস্যরা মেহেন্দীগঞ্জের পার্শ্ববর্তী মুলাদি উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি (৬০) ও মামলার দুই নম্বর আসামি আবদুস ছত্তারকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার ৯ নম্বর আসামি বজলু আকনকে উপজেলার দড়িচর খাজুরিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

যোগাযোগ করা হলে বরিশালের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি ও দুই নম্বর আসামি সাবেক ইউপি সদস্য আবদুস ছত্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, গতকাল বিকেলে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কক্ষে সবার সামনে জুতার মালা গলায় পরিয়ে ওই অফিস সহকারীকে অপমান ও হেনস্তার ঘটনা ঘটে। এ সময়ের ধারণ করা ১ মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।

এলাকার অন্তত চার ব্যক্তি জানান, দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ৪ হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে মাদ্রাসার অফিস সহকারী ও একই এলাকার সিকদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম শহিদুল ইসলাম ওরফে আলাউদ্দিনকে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাঁর বসতবাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। পরে তাঁকে ইউনিয়ন পরিষদ কক্ষে নিয়ে বিচারের নামে দুই হাত পেছন থেকে বেঁধে গলায় জুতার মালা পরিয়ে কিছুক্ষণ পর মাথার টুপি খুলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, হেনস্তা করেন চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি। এরপর উপস্থিত লোকজনের সামনে জুতার মালা গলায় পরিয়ে হাঁটতে বাধ্য করেন। এর ভিডিও ধারণ ও ছবি তোলেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ইউপি সদস্য।

শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, হেনস্তার পর তাঁকে (শহিদুল) ইউপি কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়। পরে তাঁকে সন্ধ্যার আগে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করেন। পরে এ ঘটনার ধারণ করা ওই ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, মেম্বার শফি দেওয়ান, ফিরোজ মেম্বারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি বজলু আকন, আবুল বয়াতী, কামরুজ্জামানদের উপস্থিতিতে এই বিচার করা হয়েছে। শহিদুল উপবৃত্তির ৪ হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া ইনস্যুরেন্সের ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁকে প্রাথমিকভাবে উপবৃত্তির টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। না দিলে তাঁকে জুতার মালা পরানো হবে বিচারে সিদ্ধান্ত হলে তিনি জুতার মালা পরতে স্বেচ্ছায় রাজি হন।

মেহেন্দীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবিদুর রহমান বলেন, ঘটনার পর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা গা ঢাকা দেন। এরপর বুধবার রাতে ১০ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন শহিদুল ইসলাম।