'তোমাগের আগে কেউ কিছু দেয়নি'

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গোয়ালকাটি গ্রামে।  ছবি: কল্যাণ ব্যানার্জী
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গোয়ালকাটি গ্রামে। ছবি: কল্যাণ ব্যানার্জী

‘নদীর বানে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ৮-১০ দিন নাস্তার (সড়কের) উপর ছিলাম। এখন বাড়ি আইসি। বাড়ির সবদিক পানি ডুবে নইছে। 

বাইরে যাতি হিলি গলা সমান পানি ঠেলে যাতি হয়। নোজ যে কতবার ভিজতে হয় তার ঠিকনি। এ তোমাগের ত্রাণ নিতে আইছি গলা সমান পানি ঠেলে। আমাগের এ গেরামে তোমাগের আগে কেউ কিছু দেয়নি।’ হাতে ত্রাণ পেয়ে প্রায় এক নিশ্বাসে এসব বলে ফেলেন গোয়ালকাটি গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব সফুরন বিবি।

প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের গোয়ালকাটি ও নাকনা গ্রামের ১২৫টি পরিবার ও হিজলিয়া গ্রামের ১৫ পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়।

খাবার পেলেও অনেক এলাকায় রান্নার জ্বালানিরও সংকট। ত্রাণ পেয়ে সফুরন বিবিকেতাই ছুটতে হয় লাকড়ির সন্ধানে। তিনি বলেন, ‘কী নাধবো, ঘরে কিছু ছেলো না। তোমারা কিছু চাল-ডাল দিলে, তা কাঠকুটো না হলি তো নাধদি পারবনি। এখন কাটকুটোর সন্ধানে যাব।’

নাকনা গ্রামের সাহানারা খাতুন একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। তিনি বলেন, বাঁধ ভেঙে গেলে এলাকায় বড় অফিসাররা এসে প্রতিবারই বলে যায় টেকসই বাঁধ হবে। গ্রামের মানুষ নিজেরা কোনো রকমে রিং বাঁধ দিয়ে পানি ঢোকা বন্ধ করে। কদিন পর ঝড়ে আবার বাঁধ ভেঙে সব ডুবে যায়। কেউ কথা রাখে না।

ত্রাণ পেয়ে খুশি সাহানারা বলেন, ‘এর আগে কেউ ত্রাণ দিতে আসেনি এদিকে। কিন্তু এখানে ত্রাণের চেয়ে বাঁধ করা জরুরি। আপনার একটু প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।’

সাতক্ষীরা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে প্রতাপনগর ইউনিয়নে ৩৭ হাজার লোকের বসবাস। পূর্ব ও দক্ষিণ দিক দিয়ে বয়ে গেছে প্রমত্তা খোলপেটুয়া নদী আর কপোতাক্ষ নদ।

গতকাল আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত আশাশুনি উপজেলার গোয়ালকাটি ও নাকনা গ্রামে ত্রাণ দিতে প্রতাপনগর থেকে নৌকায় করে যেতে হয়। যেতে যেতে দেখা যায় রাস্তাঘাট সব ডুবে রয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানালেন, আম্পানের পর দুই সপ্তাহ ধরেই এভাবে চলছে। ভাটায় একটু পানি কমলেও জোয়ারে আবার ডুবে যায় সব।

খাদ্যসহায়তা দিতে গিয়েছিলেন প্রথম আলো বন্ধুসভা সাতক্ষীরার সভাপতি জাহিদা জাহান, সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, সহসভাপতি মরিয়ম খাতুন, জাহিদ হাসান, শরিফ হাসান প্রমুখ।

প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ তহবিলে গতকাল জমা পড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। 

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনি এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।