অফিস-বাজার-মসজিদে যাওয়া দুজন জানলেন তাঁরা কোভিডে আক্রান্ত

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে অফিসের দায়িত্ব পালন, বাজারে কেনাকাটা ও মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায়—সবই করেছেন দুজন। কোনো উপসর্গও ছিল না তাঁদের। চার দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন এলে জানতে পারেন, তাঁরা কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত।

ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলায়। আক্রান্ত দুজন হলেন আধুনিক সদর হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী (৩০) ও সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের কর্মচারী (৫৫) । গতকাল আসা প্রতিবেদনে মোট আটজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

গতকাল রাতে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মো. মাহফুজার রহমান সরকার।

 আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ছয়জন এবং রানীশংকৈল ও পীরগঞ্জ উপজেলায় একজন করে রয়েছেন। গত ৩১ মে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের পলিমারস চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে কোভিড–১৯ রোগীর সংখ্যা এখন ১৩০। এর মধ্যে ৩৪ জন সুস্থ হয়েছেন। আর মারা গেছেন দুজন।

আধুনিক সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা নেন এক তরুণ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে ২৭ মে ওই তরুণের নমুনা সংগ্রহ করে দিনাজপুরের ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় তাঁর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ফলে হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পরীক্ষায় গতকাল একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। তবে তাঁর কোনো উপসর্গ ছিল না।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাকিবুল আলম বলেন, নুমনা সংগ্রহের পর থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী কর্মস্থলেই ছিলেন। নিয়মিত তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, চিকিৎসকদের চেম্বার ও হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গা পরিচ্ছন্নতার কাজ করে গেছেন। শনাক্ত হওয়ার পর তাঁকে এখন হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী জানান, আক্রান্ত ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মী গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালের সামনের দোকানগুলোতেও ঘুরে বেরিয়েছেন।

 অন্যদিকে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রামণের আশঙ্কা থেকে ইউএনও কার্যালয় ও সদর ভূমি কার্যালয়ের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই উদ্যোগ থেকে ৩১ মে দুই দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গতকাল নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়। নমুনা পরীক্ষায় ভূমি কার্যালয়ের এক কর্মচারীর করোনভাইরাস শনাক্ত হয়।

 ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভূমি কার্যালয়ের ওই কর্মচারী গ্রামের বাড়ি জগন্নাথপুরে থেকে এসে অফিস করতেন। উপসর্গ না থাকায় নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসার আগ পর্যন্ত ভূমি কার্যালয়ের ওই কর্মচারী অফিসে নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাজারে ঘুরে বেড়িয়েছেন। শহরের বড় মসজিদে গিয়ে নামাজও আদায় করেছেন। পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর ওই কর্মচারীকে হোম আইসোলেশনে থাকার পরামর্শের পাশাপাশি তাঁর সংস্পর্শে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা করে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

 জেলার সিভিল সার্জন মো. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানার আগে স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে গেলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। ওই সব ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা লোকজন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েন। তাই ফলাফল না জানা পর্যন্ত তিনি সবাইকে নিজ ঘরে আইসোলেশনে থাকার অনুরোধ জানান।